অনুবাদকের আরয


অনুবাদকের আরয
যে পবিত্র কুরআন মানুষের সর্ববিধ রোগে ধনন্তরী মহৌষধ, যার জ্ঞানের পরিধি অসীম অফুরন্ত, যার বিষয় বস্তুর ব্যাপকতা আকাশের সমস্ত নীলিমাকেও অতিক্রম করেছে, যার ভাব গাম্ভীর্য অতলস্পর্শী মহাসাগরের গভীরতাকেও হার মানিয়েছে, সেই মহাগ্রন্থ কুরআন নাযিল হয়েছে সুরময় কাব্যময় ভাষা আরবীতে। সুতরাং এর ভাষান্তরের বেলায় যে সাহিত্যশৈলী ও প্রকাশ রীতিতে বাংলা ভাষা প্রাঞ্জল, কাব্যময় ও সুরময় হয়ে উঠতে পারে, তার সন্ধান ও অভিজ্ঞতা রাখেন উভয় ভাষায় সমান পারদর্শী স্বনামধন্য লেখক ও লব্ধপ্রতিষ্ঠ আলেমবৃন্দ। তাই উভয় ভাষায় অভিজ্ঞ হক্কানী আলেম, নায়েবে নাবী ও সাহিত্য শিল্পীদের পক্ষেই কুরআনের সার্থক তরজমা ও তাফসীর সম্ভবপর এবং আয়ত্তাধীন।

মানবকূলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ তাঁরাই যাঁরা পবিত্র কুরআনের পঠন-পাঠনে নিজেকে নিয়োজিত করেন সর্বতোভাবে। তাই নাবী আকরামের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই পুতঃবাণী সকল যুগের জ্ঞান-তাপস ও মনীষীদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছে পাক কুরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রণয়ন করার কাজে।

তাফসীর ইবন কাসীর হচ্ছে কালজয়ী মুহাদ্দিস মুফাসসির যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী আল্লামা হাফিয ইব্‌ন কাসীরের একনিষ্ঠ নিরলস সাধনা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের অমৃত ফল। তাফসীর জগতে এ যে বহুল পঠিত সর্ববাদী সম্মত নির্ভরযোগ্য এক অনন্য সংযোজন ও অবিস্মরণীয় কীর্তি এতে সন্দেহ সংশয়ের কোন অবকাশ মাত্র নেই। হাফিজ ইমাদুদ্দীন ইবন কাসীর এই প্রামাণ্য তথ্যবহুল, সর্বজন গৃহীত ও বিস্তারিত তাফসীরের মাধ্যমে আরবী ভাষাভাষীদের জন্য পবিত্র কালামের সত্যিকারের রূপরেখা অতি স্বচ্ছ সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছেন তাঁর ক্ষুরধার বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে। এসব কারণেই এর অনবদ্যতা ও শ্রেষ্ঠত্বকে সকল যুগের বিদগ্ধ মনীষীরা সমভাবে অকপটে এবং একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন। তাই এই সসাগরা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে, সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের, এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষায়তনের গ্রন্থাগারেও সর্বত্রই এটি বহুল পঠিত, সুপরিচিত, সমাদৃত এবং হাদীস-সুন্নাহর আলোকে এক স্বতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী।

তাফসীর ইবন কাসীরের এই ব্যাপক জনপ্রিয়তা, কল্যাণকারিতা এবং অপরিসীম গুরুত্ব ও মূল্যের কথা সম্যক অনুধাবন করে আজ থেকে প্রায় অর্ধ শতাব্দী পূর্বে এটি উর্দুতে পূর্ণাঙ্গভাবে ভাষান্তরিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এই উর্দু অনুবাদের গুরু দায়িত্বটি অম্লানবদনে পালন করেছিলেন উপমহাদেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী আলেম, প্রখ্যাত ভাষাবিদ ও বিদগ্ধ মনীষী মওলানা মুহাম্মাদ সাহেব জুনাগড়ী। এই উপমহাদেশের আনাচে কানাচে দলমত নির্বিশেষে সকল মহলেই এটি সমাদৃত ও সর্বজন গৃহীত।

এই উর্দু এবং অন্যান্য ভাষায় ইবন কাসীরের অনুবাদের ন্যায় আমাদের বাংলা ভাষায়ও বহু পূর্বে এই তাফসীরটির অনুবাদ হওয়া যেমন উচিত ছিল, তেমনি এর প্রকট প্রয়োজনও ছিল। কিন্তু এ সত্ত্বেও এই সংখ্যা গরিষ্ঠের তুলনায় এবং এই প্রকট প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে আজ পর্যন্ত বাংলা ভাষায় কুরআন তরজমা ও তাফসীর রচনার প্রয়াস নিতান্ত অপর্যাপ্ত ও অপ্রতুল।

দুঃখের বিষয় ইবন কাসীরের ন্যায় এই তাফসীর সাহিত্যের একটি অতি নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ততম উপাদান এবং এর অনুবাদের অপরিহার্য প্রয়োজনকে এ পর্যন্ত শুধু মৌখিকভাবে উপলদ্ধি করা হয়েছে। প্রয়োজন মেটানোর বা পরিপূরণের তেমন কোন বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ভাষান্তরের জগদ্দল পাথরই হয়ত প্রধান অন্তরায় ও পরিপন্থী হিসাবে এতদিন ধরে পথ রোধ করে বসেছিল। অথচ বাংলা ভাষাভাষী এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী ও অগণিত ভক্ত পাঠককুল স্বীয় মাতৃভাষায় এই অভিনব তাফসীর গ্রন্থকে পাঠ করার স্বপ্নসাধ আজ বহুদিন থেকে মনের গোপন গহনে পোষণ করে আসছেন। কিন্তু এই সুদীর্ঘ দিন ধরে মুসলিম সমাজের এই লালিত আকাংখা, এই দুর্বার বাসনা-কামনা আর এই সুপ্ত অভিলাষকে চরিতার্থ করার মানসে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের মত জাতীয় সংস্থা ছাড়া আর কেহ এই দুর্গম বন্ধুর পথে পা বাড়ানোর দুঃসাহস করেননি। দেশবাসীর ধর্মীয় জ্ঞান পিপাসা আজো তাই বহুল পরিমাণে অতৃপ্ত।

কুরআনুল হাকীমের প্রতি আমার দুর্বার আকর্ষণ শৈশব এবং কৈশর থেকেই। আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন আব্বা মরহুম অধ্যাপক মওলানা আবদুল গনী সাহেবের কাছেই সর্বপ্রথম আমার কুরআন এবং তাফসীরের শিক্ষা। অতঃপর দেশ-বিদেশের শ্রেষ্ঠ খ্যাতিমান কুরআন-হাদীস বিশারদদের কাছে শিক্ষা গ্রহণের পর দীর্ঘ দুই যুগেরও অধিককাল ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণীসমূহের হাদীস ও তাফসীরের ক্লাশ নিয়েছি।
এ সব ন্যায়সঙ্গত এবং অনুকূল প্রেক্ষাপটের কারণেই আমি বহুদিন ধরে তাফসীর ইবন কাসীরকে বাংলায় ভাষান্তরিত করার সুপ্ত আকাংখা অন্তরের গোপন গহনে লালন করে আসছিলাম। কিন্তু এ পর্যন্ত একে বাস্তবে রূপ দেয়ার তেমন কোন সম্ভাবনাময় সুযোগ-সুবিধা আমি করে উঠতে পারিনি।

তাই আজ থেকে প্রায় দেড় যুগ আগে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে এই বিরাট তাফসীরের অনুবাদ কাজে হাত দিই এবং অতিসন্তর্পণে এই কন্টকাকীর্ণ পথে সতর্ক পদচারণা শুরু করি।

আল্লাহ তা'আলার অশেষ শুকরিয়া এই বিশ্বস্ততম এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও হাদীসভিত্তিক এই তাফসীর ইবন কাসীর তথা ইসলামী প্রজ্ঞার প্রধান উপাদন ও উৎস এবং রত্নভান্ডারের চাবিকাঠি আজ বাংলা ভাষী পাঠকপাঠিকার হাতে অর্পণ করতে সক্ষম হলাম। এ জন্য আমি নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান ও ধন্য মনে করছি।

আমার ন্যায় একজন সদাব্যস্ত পাপীর পক্ষে যেহেতু এককভাবে এত বড় দুঃসাহসী ও দায়িত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে বিজ্ঞ পাঠককূলের হাতে অর্পণ করা কোন ক্রমেই সম্ভবপর ছিল না, তাই আমি কতিপয় মহানুভব বিদগ্ধ ও বিজ্ঞ আলেমের অকুণ্ঠ সাহায্য-সহায়তা ও সক্রিয় সহযোগিতা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি। এই সহযোগিতার হাত যাঁরা প্রসারিত করেছেন তন্মধ্যে চাপাই নওয়াবগঞ্জ হিফযুল উলুম মাদ্রাসার স্বনামধন্য শিক্ষক আবদুল লতীফের নাম বিশেষভাবে স্মর্তব্য। আর এই স্নেহস্পদ কৃতি ছাত্রের ইহ-পারলৌকিক কল্যাণ কামনায় আল্লাহর কাছেই সুদূর প্রবাসে বসে প্রতিনিয়ত আকুল মিনতি জানাই।

তাফসীর ইবন কাসীরের বাংলা তরজমা প্রকাশের পথে সবচেয়ে বেশী অন্ত রায়, প্রতিকূলতা এবং সমস্যা দেখা দিয়েছিল অর্থের। প্রথম খন্ড থেকে একাদশ খন্ড এবং আলহাজ্জ মুহাম্মাদ আহসান সাহেবের সহযোগিতায় ত্রিশতম তথা আম্মাপারা খন্ড প্রকাশনার পর আমি যখন প্রায় ভগ্নোৎসাহ অবস্থায় হতাশ প্রাণে হাত গুটিয়ে বসার উপক্রম করছিলাম, ঠিক এমনি সময়ে একান্ত ন্যায়নিষ্ঠ ও আন্তরিকতার সংগে আমার প্রতি সার্বিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করলেন তদানীন্তন ফাইসন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মুহাম্মাদ আবদুল ওয়াহেদ সাহেব। 

জনাব আবদুল ওয়াহেদ সাহেব বাকী খণ্ডগুলির সুষ্ঠু প্রকাশনার উদ্যোগ নিতে গিয়ে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করেন। এই সদস্যমন্ডলীর মধ্যে তিনি এবং আমি ছাড়া বাকি দুজন হচ্ছেন তার সহকর্মী জনাব নূরুল আলম ও মরহুম মুহাম্মাদ মকবুল হোসেন সাহেব। কিছু দিন পর গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মামুনুর রশীদ সাহেব এই কমিটিতে যোগ দেন। এভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা অপ্রত্যাশিত ও অকল্পনীয়ভাবে তাঁর মহিমান্বিত মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারীমের ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের অচল প্রায় কাজটিকে সচল ও অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করলেন এবং এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মামুনুর রশীদ সাহেব, বেগম বদরিয়া রশীদ এবং বেগম ইয়াসমিন রোকাইয়া ওয়াহেদ। সুতরাং সকল প্রকার প্রশংসা ও স্তব-স্তুতি একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার। এই কমিটির কিছু সংখ্যক সুহৃদ ব্যক্তির আর্থিক অনুদানে এবং বিশেষ করে বেগম বাদরিয়া রশীদ ও বেগম ইয়াসমিন রোকাইয়া ওয়াহেদ -এর যৌথ প্রচেষ্টায় বিভিন্ন তাফসীর মাজলিশে যোগদানকারী বোনদের আর্থিক অনুদানের এবং প্রকাশিত খন্ডগুলি ক্রয় করার দৃষ্টান্ত চির অম্লান হয়ে থাকবে।

তাফসীর পাবলিকেশন কমিটি পুরা তাফসীর -এর মুদ্রণ ব্যবস্থা, অর্থানুকূল, অনুপ্রেরনা, উৎসাহ-উদ্দীপনা, বিক্রয় ব্যবস্থা ও অন্যান্য তত্ত্বাবধানের গুরু দায়িত্ব যেভাবে পালন করেছেন, তার জন্য আমি আল্লাহর দরবারে জনাব আবদুল ওয়াহেদ সাহেবের জন্য এবং তার সহকর্মীবৃন্দের, তার বন্ধু-বান্ধব, আর্থিক সাহায্যকারী সব ভাই বোন ও তাদের পরিবারবর্গের জন্যে সর্বাঙ্গীন কল্যাণ, মঙ্গল ও শুভ কামনা করতে গিয়ে প্রাণের গোপন গহণ থেকে উৎসারিত দোয়া, মুনাজাত ও আকুল মিনতি প্রতিনিয়তই পেশ করছি।

আরো মুনাজাত করছি যেন আল্লাহ রাব্বল আল্লামীন এই কুরআন তাফসীর প্রচারের বদৌলতে আমাদের সবার মরহুম আব্বা আম্মার রূহের প্রতি স্বীয় অজস্র রাহমাত, আশীষ ও মাগফিরাতের বারিধারা বর্ষণ করেন। আমীন! রোজ হাশরের অনন্ত সাওয়াব রিসানী এবং বারাকাতের পীযুষধারায় স্নাতসিক্ত করে আল্লাহপাক যেন তাদের জান্নাত নসীব করেন। সুম্মা আমীন!

বিশ্বের অন্যতম সেরা তাফসীর বলে স্বীকৃত তাফসীর ইবন কাসীরছাপিয়ে সুপ্রিয় পাঠকবর্গের কাছে পৌছে দেয়ার পরও একটা অতৃপ্ত বাসনা বার বার মনে চেপে বসেছিল। তা হল তাফসীর খন্ডগুলিতে যে ইসরাঈলী রিওয়ায়াত এবং দুর্বল কিংবা যঈফ হাদীস রয়েছে তা বাছাই করে বাদ দিয়ে নতুনভাবে পাঠকবর্গের কাছে পেশ করা। আল্লাহর অসীম দয়ায়, তাফসীর পাবলিকেশন কমিটির পক্ষ থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা এটি পাঠকবর্গের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হচ্ছি। এ জন্য আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

এই অনুদিত তাফসীরের উপস্থাপনা এবং অন্যান্য যে কোন ব্যাপারে যদি সুধী পাঠকমহলের পক্ষ থেকে তাফসীর পাবলিকেশন কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় তাহলে তা পরম কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদসহ গৃহীত হবে। এভাবে এই মহা কল্যাণপ্রদ কাজটিকে আরো উন্নতমানের এবং একান্ত রুচিশীলভাবে সম্পন্ন করার মানসে যে কোন মূল্যবান মতামত, সুপরামর্শ ও সদুপদেশ আমরা বেশ আগ্রহ ও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে সদা প্রস্তুত। কারণ, আমার মত অভাজন অনুবাদকের পক্ষে নানা ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে যেভাবে যতটুকু সম্ভব হয়েছে, ততটুকুই আমি আপাততঃ সুধী পাঠকবৃন্দের খিদমতে হাজির করতে প্রয়াস পেয়েছি।

১৯৯৩ সালের অক্টোবর মাসে একান্তই আকস্মিকভাবে আমার জীবনের মোড় ও গতিপথ একেবারেই পাল্টে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তথা স্বদেশের গন্ডি ও ভৌগোলিক সীমারেখা পেরিয়ে দূর-দূরান্তের পথে প্রবাসে পাড়ি জমিয়ে অবশেষে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে এসে উপনীত হই। অতঃপর এখানেই বসবাস করতে শুরু করি।

তাফসীর প্রকাশনার শুভ সন্ধিক্ষণে সাগর পারের এই সুদূর নগরীতে অবস্থান করে আরো কয়েক জনের কথা আমার বার বার মনে পড়ছে। এরা আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছে, প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে। এই প্রাণপ্রিয় স্নেহস্পদদের মধ্যে ড, ইউসুফ, ডা. রুস্তম, মেজর ওবাইদ, নাজিবুর, আতীক, হাবীব, মুহাম্মাদ ও আবদুল্লাহ প্রমুখের নাম বিশেষভাবে স্মর্তব্য ও উল্লেখ্য। একান্ত ন্যায়সঙ্গতভাবে আমি আরো দৃঢ় প্রত্যাশা করছি যে এই কুরআন তাফসীরের মহান আদর্শ ও আলোকেই যেন তারা গড়ে তুলতে পারে স্বীয় জীবনধারা।

রোজ হাশরে সবাই যখন নিজ নিজ আমলনামা সঙ্গে নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাযির হবে তখন আমাদের মত এই দীনহীন আকিঞ্চনদের সৎ আমল যেহেতু একেবারেই শূন্যের কোঠায়, তাই আমরা সেদিন মহান আল্লাহর সম্মুখীন হব এই সমস্ত সগ্রন্থরাজিকে ধারণ করে। ওয়ামা যালিকা আলাল্লাহি বি-আযীয। 'রাব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আন্তাস্ সামীউল আলীম।

এবারে আসুন উর্ধ্বগগণে তাকিয়ে অনুতপ্ত চিত্ত্বে আল্লাহর মহান দরবারে করজোড়ে মিনতি জানাই ঃ রাব্বানা লাতু আখিযনা ইন্নাসিনা...' অর্থাৎপ্রভু হে, যদি ভুল করে থাকি তাহলে দয়া করে এ জন্য তুমি আমাদের পাকড়াও করনা। ইয়া রাব্বাল আলামীন! মেহেরবানী করে তুমি আমাদের সবাইকে তোমার পাক কালাম সম্যক অনুধাবন, সঠিক হৃদয়ঙ্গম এবং তার প্রতি আমল করার পূর্ণ তাওফীক দান কর। একান্ত দয়া পরবশ হয়ে তুমি আমাদের সবার এ শ্রম সাধনা কবুল কর। একমাত্র তোমার তাওফীক এবং শক্তি প্রদানের উপরেই তাফসীর তরজমার এই মহত্তম পরিকল্পনার সুষ্ঠ পরিসমাপ্তি নির্ভরশীল। তাই এ সম্পর্কিত সকল ভ্রমপ্রমাদকে ক্ষমা-সুন্দর চোখে দেখে পবিত্র কুরআনের এই সামান্যতম খিদমাত আমাদের সবার জন্যে পারলৌকিক মুক্তির সম্বল ও নাজাতের মাধ্যম করে দাও। আমীন! সুম্মা আমীন!!

বিনয়াবনত
ড. মুহাম্মাদ মুজীবুর রাহমান
সাবেক প্রফেসর ও চেয়ারম্যান
আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়,
বাংলাদেশ।

প্রাক্তন পরিচালক,
উচ্চতর ইসলামিক শিক্ষা কেন্দ্র
ইষ্ট মিডৌ এ্যাভনিউ, নিউইয়র্ক,  
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।


No comments:

Post a Comment