হযরত জাবির (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে যে, হযরত মুআয (রাঃ)
ইশার নামাযে ইমামতি করেন এবং তাতে তিনি লম্বা কিরআত করেন। (তখন তার বিরুদ্ধে এটার
অভিযোগ করা হলে) নবী (সঃ) তাকে বলেনঃ “হে মুআয (রাঃ)! তুমি তো বড়ই ক্ষতিকর কাজ করেছ? وَالضُّحَى
- سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَىএবং إِذَا السَّمَاء انفَطَرَتْ -এই সূরাগুলো কি নেই? এই হাদীসের মূল
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও রয়েছে। হ্যাঁ, তবে إِذَا
السَّمَاء انفَطَرَتْএর বর্ণনা শুধু সুনানে নাসাঈতে রয়েছে। আর ঐ হাদীসটি
ইতিপূর্বে গত হয়েছে যাতে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি কামনা করে যে, কিয়ামতকে সে যেন স্বচক্ষে দেখছে, সে যেন إِذَا السَّمَاء انفَطَرَتْ - إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ এবং إِذَا السَّمَاء انشَقَّتْ -এই সূরাগুলো পাঠ করে।”
--
দয়াময় পরম দয়ালু
অল্লাহর নামে শুরু করছি।
১। আকাশ যখন বিদীর্ণ হবে,
২। যখন নক্ষত্রমণ্ডলী
বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পড়বে,
৩। যখন সমুদ্র উদ্বেলিত
হবে,
৪। এবং যখন সমাধিসমূহ সমুখিত হবে;
৫। তখন প্রত্যেকে যা
পূর্বে প্রেরণ করেছে এবং পশ্চাতে পরিত্যাগ করেছে তা পরিজ্ঞাত হবে।
৬। হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহান প্রতিপালক হতে প্রতারিত করলো?
৭। যিনি তোমাকে সৃষ্টি
করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন এবং তৎপর সুবিন্যস্ত করেছেন,
৮। যেই আকৃতিতে চেয়েছেন, তিনি তোমাকে সংযোজিত করেছেন।
৯। না, কখনই না, তোমরা তো শেষ বিচারকে অস্বীকার করে থাকো;
০। অবশ্যই রয়েছে তোমাদের উপর সংরক্ষকগণ;
১১। সম্মানিত লেখক-বর্গ;
১২। তারা অবগত হয় যা তোমরা কর।
--
আল্লাহ্ তা'আলা বলেন যে, কিয়ামতের দিন আকাশ
ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ السَّمَاء مُنفَطِرٌ অর্থাৎ “ওর সাথে আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে।” (৭৩ঃ ১৮)।
আর নক্ষত্ররাজি
বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পড়বে। লবণাক্ত ও মিষ্টি পানির সমুদ্র পরস্পর একাকার হয়ে যাবে।
পানি শুকিয়ে যাবে, কবরসমূহ ফেটে যাবে।
কবর, ফেটে যাওয়ার পর
মৃতেরা জীবিত হয়ে উঠবে। তারপর সব মানুষ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব আমল সম্পর্কে
অবহিত হবে। এরপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদেরকে ধমক দিয়ে বলেনঃ হে মানুষ! কিসে তোমাদেরকে
প্রতিপালক হতে প্রতারিত করলো? আল্লাহ্ তা'আলা যে, এ কথার জবাব চান বা
শিক্ষা দিচ্ছেন তা নয়। কেউ কেউ এ কথাও বলেন যে, বরং আল্লাহ্ তা'আলা জবাব দিয়েছেন
যে, আল্লাহ্ তা'আলার অনুগ্রহ তাদেরকে
গাফিল করে ফেলেছে। এ অর্থ বর্ণনা করা ভুল। সঠিক অর্থ হলোঃ হে আদম সন্তান! নিজেদের
সম্মানিত প্রতিপালকের প্রতি তোমরা এতোটা উদাসীন হয়ে পড়লে কেন? কোন্ জিনিস তোমাদেরকে
তাঁর অবাধ্যতায় উদ্বুদ্ধ করেছে? কেনই বা তোমরা তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লেগে পড়েছো? এটা তো মোটেই
সমীচীন হয়নি। যেমন হাদীস শরীফে
এসেছেঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা'আলা বলবেনঃ হে আদম-সন্তান! কোন জিনিস তোমাকে আমার সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করেছে? হে আদম সন্তান!
তুমি আমার রাসূলদেরকে কি জবাব দিয়েছো?”
হযরত সুফিয়ান (রঃ) হতে
বর্ণিত আছে যে, হযরত উমার (রাঃ)
একটি লোককে يَا أَيُّهَا الْإِنسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ-এ আয়াতটি পাঠ করতে শুনে বলেনঃ “অজ্ঞতা।”১ অর্থাৎ মানুষের অজ্ঞতাই তাকে তার মহান প্রতিপালক সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করেছে।
হযরত ইবনে উমার (রাঃ), হযরত ইবনে আব্বাস
(রাঃ) প্রমুখ গুরুজন হতেও এরূপই বর্ণিত হয়েছে।
কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, মানুষকে
বিভ্রান্তকারী হলো শয়তান। হযরত ফুয়েল ইবনে আইয়ায (রঃ) বলেন, যদি আমাকে জিজ্ঞেস
করা হয়ঃ “কিসে বিভ্রান্ত
করেছে। তবে অবশ্যই আমি বলবোঃ তোমার লটকানো পর্দাই তোমাকে বিভ্রান্ত করেছে। আবু বকর
আল আররাক (রঃ) বলেনঃ “কিসে তোমাকে তোমায়
মহান প্রতিপালক সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করেছে?” যদি এ প্রশ্ন আমাকে করা হয় তবে অবশ্যই আমি বলবোঃ অনুগ্রহকারীর অনুগ্রহই আমাকে
বিভ্রান্ত করেছে।
মারেফাত অভিজ্ঞ
ব্যক্তিদের কারো কারো মতে এখানে كريمশব্দটিই যেন জবাবের ইঙ্গিত বহন করছে। কিন্তু এ উক্তিটি
তেমন যুক্তিযুক্ত নয়। বরং এর প্রকৃত তাৎপর্য হলো এই যে, অনুগ্রহশীল আল্লাহর
অনুগ্রহের মুকাবিলায় মন্দ কাজ তথা দুস্কৃতি না করাই সমীচীন। কালবী (রঃ) এবং
মুকাতিল (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি আসওয়াদ
ইবনে শুরায়েকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। এই দুবৃত্ত নবী পাক (সঃ)-কে মেরেছিল।
তৎক্ষণাৎ তার উপর আল্লাহর আযাব না আসায় সে আনন্দে আটখানা হয়েছিল। তখন এই আয়াত
নাযিল হয়।
এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন এবং তৎপর সুবিন্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ কিসে তোমাকে তোমার
মহান প্রতিপালক সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করেছে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমাকে সুঠাম
করেছেন এবং মধ্যম ধরনের আকার-আকৃতি প্রদান করেছেন ও সুন্দর চেহারা দিয়ে সুদর্শন
করেছেন?
হযরত বিশর ইবনে জাহহাহ্
আল ফারাশী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর হাতের তালুতে থুথু ফেলেন এবং ওর উপর তার একটি
আঙ্গুল রেখে বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ হে আদম
সন্তান! তুমি কি আমাকে অপারগ করতে পার? অথচ আমি তোমাকে এই রকম জিনিস হতে সৃষ্টি করেছি, তারপর ঠিকঠাক করেছি, এরপর সঠিক
আকার-আকৃতি দিয়েছি। অতঃপর পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে চলাফেরা করতে শিখিয়েছি ।
পরিশেষে তোমার ঠিকানা হবে মাটির গর্ভে। অথচ তুমি তো বড়ই বড়াই করছো, আমার পথে দান করা
হতে বিরত থেকেছে। তারপর যখন কণ্ঠনালীতে নিঃশ্বাস এসে পৌঁছেছে তখন বলেছেঃ এখন আমি
সাদকা বা দান-খয়রাত করছি। কিন্তু এখন আর দান-খয়রাত করার সময় কোথায়?২
এরপর ঘোষিত হচ্ছেঃ যেই
আকৃতিতে চেয়েছেন, তিনি তোমাকে গঠন
করেছেন। অর্থাৎ পিতা, মাতা, মামা, চাচার চেহারার সাথে
সাদৃশ্যপূর্ণ করে গঠন করেছেন। আলী ইবনে রাবাহ (রাঃ) তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তার
দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর দাদাকে নবী
(সঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার ঘরে কি
সন্তান জন্মগ্রহণ করবে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “ছেলে হবে অথবা
মেয়ে হবে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)
আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ “কার সাথে
সাদৃশ্যযুক্ত হবে।” তিনি জবাবে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার সাথে অথবা তার মায়ের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত হবে।” তখন রাসূলুল্লাহ্
(সঃ) তাকে বললেনঃ “থামো, এরূপ কথা বলো না।
বীর্য যখন জরায়ুতে অবস্থান করে তখন হযরত আদম (আঃ) পর্যন্ত নাসাব বা বংশ ওর সামনে
থাকে। তুমি কি আল্লাহ্ তা'আলার কিতাবের فِي أَيِّ صُورَةٍ مَّا شَاء رَكَّبَكَ-এই আয়াতটি পড়নি? অর্থাৎ “যেই আকৃতিতে চেয়েছেন, তিনি তোমাকে গঠন
করেছেন।”৩
সহীহ বুখারী ও সহীহ
মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল
(সঃ)! আমার স্ত্রী একটি কালো বর্ণের সন্তান প্রসব করেছে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)
তাকে বললেনঃ “তোমার উট আছে কি?" লোকটি উত্তরে বলেনঃ “হ্যাঁ, আছে।” তিনি জিজ্ঞেস
করলেনঃ “উটগুলো কি রঙ এর?” লোকটি জবাব দিলেনঃ “লাল রঙ-এর।” তিনি আবার প্রশ্ন
করলেনঃ “উটগুলোর মধ্যে
সাদা-কালো রঙ বিশিষ্ট কোন উট আছে কি?” লোকটি উত্তর দিলেনঃ “হ্যাঁ, আছে।” তিনি জিজ্ঞেস
করলেনঃ “লাল রঙ বিশিষ্ট
নর-মাদী উটের মধ্যে এই রঙ-এর উট কিভাবে জন্ম নিলো?” লোকটি বললেনঃ “সম্ভবতঃ উধ্বর্তন
বংশধারায় কোন শিরা সে টেনে নিয়েছে।” তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) লোকটিকে বললেনঃ “তোমার সন্তানের কালো রঙ হওয়ার পিছনেও এ ধরনের কোন কারণ থেকে থাকবে।” হযরত ইকরামা (রঃ)
বলেন যে, তিনি ইচ্ছা করলে
বানরের বা শূকরের আকৃতিতেও সৃষ্টি করতে পারেন। আবু সালেহ্ (রঃ) বলেন যে, তিনি (আল্লাহ)
ইচ্ছা করলে কুকুরের আকৃতিতেও সৃষ্টি করতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে গাধা বা শূকরের আকৃতি দিয়ে গঠন করতে পারেন।
কাতাদাহ্ (রঃ) বলেনঃ এ
সবই সত্য যে, আল্লাহ্ তাবারাকা
ওয়া তা'আলা সব কিছুরই উপর
সক্ষম। কিন্তু আমাদের সেই মালিক আমাদেরকে উন্নত, উৎকৃষ্ট, হৃদয়গ্রাহী এবং
সুন্দর আকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
এরপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ মহান ও
অনুগ্রহশীল আল্লাহর অবাধ্যতায় তোমাদেরকে কিয়ামতের প্রতি অবিশ্বাসই শুধু উদ্বুদ্ধ
করেছে। কিয়ামত যে অবশ্যই সংঘটিত হবে এটা তোমাদের মন কিছুতেই বিশ্বাস করছে না। এ
কারণেই তোমরা এ রকম বেপরোয়া মনোভাব ও ঔদাসীন্য প্রদর্শন করেছে। তোমাদের এই
বিশ্বাস রাখা অবশ্যই উচিত যে, তোমাদের উপর সম্মানিত, সংরক্ষণকারী লিপিকর
ফেরেশতাবৃন্দ নিযুক্ত রয়েছেন। তাঁদের সম্পর্কে তোমাদের সচেতন হওয়া দরকার। তারা তোমাদের
আমলসমূহ লিপিবদ্ধ করছেন ও সংরক্ষণ করছেন। পাপ, অন্যায় বা মন্দ কাজ করার ব্যাপারে তোমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।
হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে
বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)
বলেছেনঃ “তোমরা সম্মানিত
লিপিকর ফেরেশতাদের সম্মান করো। তারা নাপাক অবস্থা এবং পায়খানায় যাওয়ার অবস্থা ছাড়া কখনোই তোমাদের থেকে
পৃথক হন না। গোসলের সময়েও তোমরা পর্দা করবে। দেয়াল যদি না থাকে তবে উট দ্বারা
হলেও পর্দার ব্যবস্থা করবে। যদি সেটাও সম্ভব না হয় তবে নিজের কোন সাথীকে দাঁড়
করিয়ে রাখবে, তাহলে ওটাই পর্দার
কাজ করবে।”৪
হাফিয আবু বকর আল বাযযার
(রঃ) এ হাদীসটি হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। এতে শব্দের কিছু হেরফের
রয়েছে। এতে একথাও রয়েছেঃ আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদেরকে উলঙ্গ হতে নিষেধ করেছেন। তোমরা আল্লাহর এই ফেরেশতাদের সম্মান করো। এতে এও আছে যে, গোসলের সময়েও এই ফেরেশতারা দূরে চলে যান।
অন্য একটি হাদীসে আছে যে, কিরামান কাতিবীন
আল্লাহর সামনে বান্দার দৈনন্দিনের আমল উপস্থাপন করেন। যদি দেখা যায় যে, শুরুতে ও শেষে
ইসতিগফার রয়েছে, তবে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ আমি আমার এ
বান্দার (শুরু ও শেষের) মধ্যবর্তী সমস্ত গুণাহ মাফ করে দিলাম।
আরো একটি দুর্বল হাদীসে
বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তা'আলার কোন কোন ফেরেশতা
মানুষ এবং তাদের আমলসমূহ জানেন ও চিনেন। কোন বান্দাকে পুণ্য কাজে লিপ্ত দেখলে তারা
পরস্পর বলাবলি করেন যে, আজ রাত্রে অমুক
ব্যক্তি মুক্তি লাভ করেছে। পক্ষান্তরে কাউকে পাপ কর্মে লিপ্ত দেখলে তারা নিজেদের
মধ্যে সেটাও আলোচনা করেন এবং বলেন যে, আজ রাত্রে অমুক ব্যক্তি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
--
১৩। পুণ্যবানগণতো থাকবে
পরম সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে;
১৪। এবং দুর্গকারীরা
থাকবে জাহান্নামে;
১৫। তারা কর্মফল দিবসে
তাতে প্রবিষ্ট হবে;
১৬। তারা ওটা হতে
অন্তর্হিত হতে পারবে না।
১৭। কর্মফল দিবস কি তা কি
তুমি জান?
১৮। আবার বলিঃ কর্মফল
দিবস কি তা কি তুমি অবগত আছ?
১৯। সেই দিন একে অপরের
জন্যে কিছু করবার সামর্থ্য থাকবে না; এবং সেই দিন সমস্ত
কর্তৃত্ব হবে একমাত্র আল্লাহর।
--
এখানে আল্লাহ তা'আলা তাঁর ঐ বান্দাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন যারা তার অনুগত, বাধ্যগত এবং যারা
পাপকর্ম হতে দূরে থাকে।
হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “তাদেরকে আবরার' বলা হয়েছে এই
কারণে যে, তারা পিতামাতার
অনুগত ছিল এবং সন্তানদের সাথে ভাল ব্যবহার করতো।” ৫
পাপাচারীরা থাকবে
জাহান্নামে। হিসাব-নিকাশ এবং প্রতিদান লাভ করার দিনে তথা কিয়ামতের দিনে তারা
জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এক ঘন্টা বা মুহূর্তের জন্যেও তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি
হতে নিষ্কৃতি দেয়া হবে না। তারা মৃত্যু বরণও করবে না এবং শান্তিও পাবে না।
ক্ষণিকের জন্যেও তারা শাস্তি হতে দূরে থাকবে না।
এরপর কিয়ামতের বিভীষিকা
প্রকাশের জন্যে দুই দুইবার আল্লাহ পাক বলেনঃ ঐদিন কেমন তা তোমাদেরকে কোন জিনিস
জানিয়েছে। তারপর তিনি নিজেই বলেনঃ কেউ কারো কোন উপকার করতে পারবে না এবং শাস্তি
হতে নিষ্কৃতি দেয়ার ক্ষমতা রাখবে না। তবে হ্যাঁ, কারো জন্যে সুপারিশের অনুমতি যদি স্বয়ং আল্লাহ কাউকেও প্রদান করেন তবে সেটা
আলাদা কথা।
এখানে একটি হাদীস উল্লেখ
করা সমীচীন মনে করছি। তাহলো এই যে, নবী (সঃ) বলেনঃ “হে বানু হাশিম! তোমরা
নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কর। জেনে রেখো যে, আমি (কিয়ামতের
দিন) তোমাদেরকে আল্লাহর আযাব হতে রক্ষা করার কোনই অধিকার রাখবো না।।”
সূরা শুআ'রার তাফসীরের শেষাংশে এ
হাদীসটি গত হয়েছে। এখানে এ কথাও বলেছেন যে, সেই দিন কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
لِّمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ ۖ لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
অর্থাৎ “আজ কর্তৃত্ব কার? এক, পরাক্রমশালী
আল্লাহরই।” (৪০ : ১৬) আরো বলেনঃ
مَالِكِ يَوْمِ
الدِّينِ [١:٤] অর্থাৎ “যিনি কর্মফল দিবসের
মালিক।” আর এক জায়গায় বলেনঃ
الْمُلْكُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ لِلرَّحْمَٰنِ
অর্থাৎ “সেই দিন প্রকৃত কর্তৃত্ব হবে দয়াময়ের (অর্থাৎ আল্লাহর।)" (২৫ঃ২৬)
এসব আয়াতের আসল বক্তব্য হলো এই যে, সেই দিন মালিকানা ও
সর্বময় কর্তৃত্ব একমাত্র কাহহার ও রহমানুর রাহীম আল্লাহর হাতে ন্যস্ত থাকবে।
অবশ্য এখনো তিনিই সর্বময় ক্ষমতা ও একচ্ছত্র কর্তৃত্বের অধিকারী বটে, কিন্তু সেই দিন
বাহ্যিকভাবেও অন্য কেউই কোন হুকুমত ও কর্তৃত্বের অধিকারী থাকবে না। বরং সমস্ত
কর্তৃত্ব হবে একমাত্র আল্লাহর।
--
( সূরাঃ ইনফিতার এর তাফসীর সমাপ্ত )
--
❏ টীকাঃ
১. এ হাদীসটি ইমাম ইবনে
আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
২. এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে।
৩. এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ), ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ) এবং ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এটা যদি সহীহ্ হতো তবে এটা আয়াতের অর্থ প্রকাশের
জন্যে যথেষ্ট হতো কিন্তু এ হাদীসের সনদ সঠিক প্রমাণিত নয়। কেননা, মুতহির ইবনে
হায়সাম (রঃ) বলেন যে, এতে আবু সাঈদ ইবনে
ইউনুস নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন যার হাদীস পরিত্যক্ত। তাছাড়া তার ব্যাপারে আরো
অভিযোগ রয়েছে।
৪. এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
৫. এ হাদীসটি ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
No comments:
Post a Comment