আবু হাবল উদওয়ানী (রাঃ)
হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ
(সঃ)-কে সাকীফ গোত্রের পূর্ব প্রান্তে ধনুকের উপর অথবা লাঠির উপর ভর দিয়ে وَالسَّمَاء
وَالطَّارِقِ এই সূরাটি সম্পূর্ণ পাঠ করতে শুনেন। রাসূলুল্লাহ্
(সঃ) সেখানে তাদের নিকট সাহায্যের জন্যে গিয়েছিলেন। হযরত আবু হাবল উদওয়ানী (রাঃ)
সূরাটি মুখস্থ করে নেন। ঐ সময় তিনি মুশরিক ছিলেন। পরে তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত
হয়েছিলেন। সাকীফ গোত্রের মুশরিকদেরকে তিনি সূরাটি পাঠ করে শুনান। তারা এটা শুনে
বললোঃ “যদি আমরা তাঁর কথা
সত্য বলে জানতাম বা বিশ্বাস করতাম তবে তো আমরা তার আনুগত্যই করতাম।”
সুনানে নাসাঈতে হযরত
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত মুআয (রাঃ) মাগরিবের নামাযে সূরা বাকারাহ্ ও সূরা নিসা পাঠ করেন। তখন নবী
করীম (সঃ) তাকে বলেনঃ “হে মুআয (রাঃ)!
তুমি (জনগণকে) ফিৎনায় ফেলবে? وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا - وَالسَّمَاء
وَالطَّارِقِ এবং এ ধরনের (ছোট ছোট) সূরা পাঠ করাই কি তোমার জন্যে
যথেষ্ট ছিল না?”
--
করুণাময় কৃপানিধান
আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১। শপথ আকাশের এবং
রাত্রিতে যা আবির্ভূত হয় তার;
২। তুমি কী জান রাত্রিতে
যা আবির্ভুত হয় তা কি?
৩। ওটা দীপ্তিমান
নক্ষত্র।
৪। প্রত্যেক জীবের উপরই সংরক্ষক রয়েছে।
৫। সুতরাং মানুষের লক্ষ্য
করা। উচিত যে, তাকে কিসের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।!
৬। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্থলিত পানি হতে
৭। এটা নির্গত হয়
পৃষ্ঠদেশ ও পঞ্জরাস্থির মধ্য হতে।
৮। নিশ্চয় তিনি তার
পুনরাবর্তনে ক্ষমতাবান।
৯। যেই দিন গোপন বিষয়
সমূহ প্রকাশিত হবে।
১০। সেই দিন তার কোন
সামর্থ্য থাকবে না এবং সাহায্যকারীও না।
--
আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা আকাশ এবং উজ্জ্বল
নক্ষত্র রাজির শপথ করছেন। لطَّارِقِ এর তাফসীর করা হয়েছে চমকিত তারকা বা নক্ষত্র। কারণ এই
নক্ষত্র দিনের বেলায় লুকায়িত থাকে এবং রাত্রিকালে আত্মপ্রকাশ করে। একটি সহীহ্
হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)
বলেছেনঃ “কেউ যেন রাত্রিকালে
তার নিজের বাড়ীতে অজ্ঞাতসারে প্রবেশ না করে।”
এখানেও لطَّارِقِ শব্দ রয়েছে। অন্য একটি হাদীসে এ শব্দটি দুআ অর্থেও
ব্যবহৃত হয়েছে।
ثَّاقِبُ বলা হয় চমকিত আলোকপিণ্ডকে যা শয়তানের উপর নিক্ষিপ্ত হয় এবং তাকে জ্বালিয়ে
দেয়। প্রত্যেক লোকের উপর আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ হতে একজন হিফাযতকারী নিযুক্ত রয়েছেন। তিনি তাকে বিপদ-আপদ থেকে
রক্ষা করে থাকেন। যেমন অন্যত্র রয়েছেঃ
لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّن
بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللّهِ
অর্থাৎ “তার সামনে-পিছনে
পালাক্রমে আগমনকারী ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছে, তারা আল্লাহর আদেশক্রমে তার হিফাযত করে থাকে।”(১৩ : ১১)
এরপর মানুষের দুর্বলতার
বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ্ পাক বলেনঃ মানুষের এটা চিন্তা করা উচিত যে, তাকে কি জনিস থেকে
সৃষ্টি করা হয়েছেঃ তাদের সৃষ্টির মূল কি? এখানে অত্যন্ত সূক্ষতার সাথে কিয়ামতের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছেঃ যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি কেন পূনরুখানে সক্ষম হবেন না? যেমন আল্লাহ্ তা'আলা অন্য জায়গায়
বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي يَبْدَأُ
الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ
অর্থাৎ “যিনি প্রথমবার
সৃষ্টি করেছেন তিনি পুনরুত্থান ঘটাবেন এবং এটা তার জন্যে খুবই সহজ।” (৩০ : ২৭)
মানুষ সবেগে স্খলিত পানি
অর্থাৎ নারী-পুরুষের বীর্যদ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। এই বীর্য পুরুষের পৃষ্ঠদেশ হতে এবং
নারীর বক্ষদেশ হতে স্খলিত হয়। নারীদের এই বীর্য হলুদ রঙের এবং পাতলা হয়ে থাকে।
উভয়ের বীর্যের সংমিশ্রণে শিশুর জন্ম হয়।
হার পরার জায়গাকে তারীবা' বলা হয়। কাঁধ থেকে নিয়ে বুক পর্যন্ত জায়গাকেও তারীবা বলা হয়ে থাকে।
কণ্ঠনালী হতে বুক পর্যন্ত জায়গাকেও কেউ কেউ তারীবা' বলেছেন। বুক থেকে নিয়ে উপরের অংশকেও তারীবা’ বলা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, নীচের দিকের চারটি পঞ্জরকে তারীবা’ বলা হয়। কেউ কেউ আবার উভয় স্তনের মধ্যবর্তী স্থানকেও তারীবা’ বলেছেন। এ কথাও বলা
হয়েছে যে, পিঠ ও বুকের
মধ্যবর্তী স্থানকে ترءبةবলা হয়।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ إِنَّهُ عَلَى رَجْعِهِ لَقَادِرٌ (নিশ্চয় তিনি তার প্রত্যানয়নে ক্ষমতাবান)। এতে দুটি
উক্তি রয়েছে। একটি উক্তি এই যে, এর ভাবার্থ হলোঃ বের হওয়া পানি বা বীর্যকে তিনি ওর জায়গায় ফিরিয়ে দিতে
সক্ষম। এটা মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ)
প্রভৃতি গুরুজনের উক্তি। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, এর ভাবার্থ হলোঃ তাকে পুনরায় সৃষ্টি করে আখেরাতের দিকে প্রত্যাবৃত্ত করতেও
তিনি ক্ষমতাবান। এটা হযরত যহ্হাক (রঃ)-এর উক্তি। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটাকেই
পছন্দ করেছেন। কেননা, দলীল হিসেবে এটা
কুরআন কারীমের মধ্যে কয়েক জায়গায় উল্লিখিত হয়েছে।
এরপর আল্লাহ্ তাবারাকা
ওয়া তা'আলা বলেনঃ
কিয়ামতের দিন গোপন বিষয়সমূহ খুলে যাবে, রহস্য প্রকাশিত হয়ে পড়বে এবং লুকায়িত সবকিছুই বের হয়ে যাবে।
সহীহ বুখারী ও সহীহ
মুসলিমে হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক গাদ্দার-বিশ্বাসঘাতকের নিতম্বের নিকট তার বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা প্রোথিত করা হবে এবং ঘোষণা করা হবেঃ “এই ব্যক্তি হলো
অমুকের পুত্র অমুক গাদ্দার, বিশ্বাসঘাতক ও
আত্মসাৎকারী।”
সেই দিন মানুষ নিজেও কোন
শক্তি লাভ করবে না এবং তার সাহায্যের জন্যে অন্য কেউও এগিয়ে আসবে না। অর্থাৎ
নিজেকে নিজেও আল্লাহ্র আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে না এবং অন্য কেউও তাকে রক্ষা
করতে সক্ষম হবে না।
--
১১। শপথ আসমানের যা ধারণ করে বৃষ্টি,
১২। এবং শপথ যমীনের যা বিদীর্ণ হয়,
১৩। নিশ্চয় আল-কুরআন মীমাংসাকারী বাণী।
১৪। এবং এটা নিরর্থক নয়।
১৫। তারা ভীষণ ষড়যন্ত্র
করে।
১৬। আর আমিও ভীষণ কৌশল করি।
১৭। অতএব কাফিরদেরকে অবকাশ দাও, তাদেরকে অবকাশ দাও
কিছুকালের জন্যে।
--
رَّجْعِ শব্দের অর্থ হলো বৃষ্টি ধারা, বৃষ্টি রয়েছে যেই মেঘে সেই মেঘ। এই বাদলের মাধ্যমে প্রতিবছর বান্দাদের রিযকের
ব্যবস্থা হয়ে থাকে। যেই রিযক ছাড়া ওরা এবং ওদের পশুগুলো মৃত্যুমুখে পতিত হতো। সূর্য, চন্দ্র এবং নক্ষত্রসমূহের এদিক ওদিক প্রত্যাবর্তন অর্থেও এ শব্দ ব্যবহৃত
হয়েছে।
জমীন ফেটে যায়। শস্য
দানা, ঘাস, তৃণ বের হয়। এরপর ঘোষিত
হচ্ছেঃ নিশ্চয় আল-কুরআন মীমাংসাকারী বাণী। ন্যায় বিচারের কথা এতে লিপিবদ্ধ
রয়েছে। নিরর্থক ও বাজে কথা সম্বলিত কোন কিস্সা-কাহিনী এটা নয় । কাফিররা এই
কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, আল্লাহ্র পথ থেকে লোকদেরকে ফিরিয়ে রাখে। নানারকম ধোকা, প্রতারণা এবং ফেরেকবাযীর মাধ্যমে লোকদেরকে কুরআনের বিরুদ্ধাচরণে উদ্বুদ্ধ
করে।
আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি এই কাফিরদেরকে কিছুটা অবকাশ দাও। তারপর দেখবে
যে, অচিরেই তারা
নিকৃষ্টতম আযাবের শিকার হবে। যেমন অন্যত্র রয়েছেঃ
نُمَتِّعُهُمْ قَلِيلًا ثُمَّ
نَضْطَرُّهُمْ إِلَى عَذَابٍ غَلِيظٍ অর্থাৎ “আমি তাদেরকে
সামান্য সুখ ভোগ করাবো, অতঃপর তাদেরকে কঠোর
শাস্তির দিকে আসতে বাধ্য করবো।” (৩১ঃ ২৪)।
--
সূরাঃ ত্বারিক এর তাফসীর সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment