সূরাঃ মুতাফফিফীন/৮৩, মাক্কী| (আয়াতঃ ৩৬, রুকূঃ ১)



--
দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১। মন্দ পরিণাম তাদের জন্যে যারা মাপে কম দেয়।
২। যারা লোকের নিকট হতে মেপে নেয়ার সময় পৃর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে,
৩। এবং যখন তাদের জন্যে মেপে অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়।
৪। তারা কি চিন্তা করে না যে তারা পুনরুত্থিত হবে।
৫। সেই মহান দিবসে;
৬। যেদিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ জগতসমূহের প্রতিপালকের সম্মুখে।
--
সুনানে নাসাঈ ও সুনানে ইবনে মাজাহতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ নবী করীম (সঃ) যে সময় মদীনায় আগমন করেন সে সময় মদীনাবাসীরা মাপ জোকের ব্যাপারে খুবই নিকৃষ্ট ধরনের আচরণ করতোএই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হলে তারা মাপ জোক ঠিক করে নেয়।

হযরত হিলাল ইবনে তালাক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ)-কে বললামঃ মক্কা ও মদীনার অধিবাসীরা খুবই ভাল মাপ জোক করে থাকে। আমার এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ তা করবে না কেন? তুমি কি শুননি যে, আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেনঃ  وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِينَ অর্থাৎ মন্দ পরিণাম তাদের জন্যে যারা মাপে কম দেয়।

تظفيف -এর অর্থ হলো মাপে কম দেয়া। অর্থাৎ অন্যদের নিকট হতে নেয়ার সময় বেশী নেয়া, আর অন্যদেরকে দেয়ার সময় কম দেয়া। এ জন্যেই তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত। তারা নিজেদের প্রাপ্য নেয়ার সময় পুরোপুরি নেয়, এমনকি বেশীও নেয়। অথচ অন্যদের প্রাপ্য দেয়ার সময় কম করে দেয়।
সঠিক কথা এটাই যে, كلوا এবং وذنوএই ক্রিয়াদ্বয়কে  مبعدىমেনে নেয়া হবে, আরهم সর্বনামকে محلا منصوب ধরা হবে, যদিও কেউ কেউ এটাকে ضعير مؤكد মেনেছেন, যা وزنو - كالوا -এর মধ্যে লুক্কায়িত সর্বনামের تاكيد -এর জন্যে। আর مفعول কে উহ্য মেনেছেন, যার উপর كلام -এর دلاات বিদ্যমান রয়েছে। দুই ভাবেই ভাবার্থ প্রায় একই হবে।

মাপ ও ওজনকে ঠিক করার হুকুম কুরআন কারীমের নিম্নের আয়াতগুলোতেও রয়েছে
وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذا كِلْتُمْ وَزِنُواْ بِالقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً
অর্থাৎমেপে দিবার সময় পূর্ণ মাপে দিবে এবং ওজন করবে সঠিক দাঁড়িপাল্লায়, এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্ট।” (১৭ঃ ৩৫) আর এক জায়গায় বলেনঃ
وَأَوْفُواْ الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ لاَ نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا
অর্থাৎন্যায্য মানের সাথে মাপ ও ওজনকে পূর্ণ করো, কাউকেও তার সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দেয়া হয় না।” (৬ : ১৫২)
আরো বলেনঃ
وَأَقِيمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيزَانَ -
অর্থাৎওজনের ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠিত কর এবং ওজনে কম দিয়ো না।” (৫৫:৯)

হযরত শুআইব (আঃ)-এর কওমকে আল্লাহ তা'আলা এই মাপের কারণেই। নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন। এখানেও আল্লাহ্ তা'আলা ভয় প্রদর্শন করেছেন যে, জনগণের প্রাপ্য যারা নষ্ট করছে তারা কি কিয়ামতের দিনকে ভয় করে না, যেদিন সেই মহান সত্তার সামনে তাদের দাঁড়াতে হবে? যেই সত্তার কাছে প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য কিছুই গোপন নেই? সেই দিন খুবই বিভীষিকাময়, আশংকাপূর্ণ, ভয়াবহ এবং উদ্বেগজনক দিন হবে। সেই দিন এসব ক্ষতিসাধনকারী লোক জাহান্নামের দাউ দাউ করে জ্বলা গণগণে আগুনে প্রবেশ করবে। সেই দিন সমস্ত মানুষ নগ্নপায়ে, নগ্নদেহে খান্না-বিহীন অবস্থায় আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে। তারা যেখানে দাঁড়াবে সে জায়গা হবে সংকীর্ণ, অন্ধকারাচ্ছন্ন, নানা বিপদ-বিভীষিকাময় আপদে পরিপূর্ণ। সেখানে এমন সব বালা-মুসীবত নাযিল হবে যে, মন অতিশয় বিচলিত ও ভয়কাতর হয়ে পড়বে। হুশ-জ্ঞান সব লোপ পেয়ে যাবে।

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেনঃযেদিন সমস্ত মানুষ জগৎসমূহের প্রতিপালকের নিকট দাঁড়াবে সেই দিন তাদের কেউ কেউ তার ঘামে তার কর্ণদ্বয়ের অর্ধেক পর্যন্ত ডুবে যাবে।

হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ কিন্দী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃকিয়ামতের দিন সূর্য বান্দাদের এতো নিকটে থাকবে যে, ওর দূরত্ব হবে এক মাইল বা দুই মাইল। ঐ সময় সূর্যের প্রচণ্ড তাপ হবে। প্রত্যেক লোক নিজ নিজ আমল অনুপাতে ঘামের মধ্যে ডুধে যাবে। কারো পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত ঘাম পৌছবে, আবার কারো কারো ঘাম তার লাগামের মত হয়ে যাবে (অর্থাৎ ঘাম তার নাক পর্যন্ত পৌছে যাবে)।

হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃকিয়ামতের দিন সূর্য এতো নিকটে আসবে যে, ওটা মাত্র এক মাইল উপরে থাকবে। ওর তাপ এতো তীব্র ও প্রচণ্ড হবে যে, ওর তাপে মাথার মগ টগবগ করে ফুটতে থাকবে যেমন চুল্লীর উপর রাখা হাঁড়ির পানি ফুটতে থাকে। মানুষকে তাদের ঘাম তাদের পাপ অনুপাতে ঢেকে ফেলবে। ঘাম কারো পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত পৌছবে, কারো পৌছবে পায়ের গিরা পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত। আবার কারো ঘাম তার লাগাম হয়ে যাবে। (অর্থাৎ তার একেবারে নাক পর্যন্ত পৌছে যাবে।

অন্য এক বর্ণনা আছে যে, নবী করীম (সঃ) নিজের মুখে আঙ্গুল রেখে বলে এভাবে ধ্বম লাগামের মত ঘিরে থাকবে। তারপর তিনি হাত দ্বারা ইশারা করলেনঃকেউ কেউ ঘামের মধ্যে সম্পূর্ণ ডুবে যাবে।

একটি হাদীসে আছে যে, তারা সত্তর বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে, তারা এর মধ্যে কোন কথা বলবে না। এ কথাও বলা হয়েছে যে, তারা তিনশ বছর দাঁড়িয়ে থাকবে। আবার এও বলা হয়েছে যে, তারা চল্লিশ হাজার বছর দাঁড়িয়ে থাকবে এবং দশ হাজার বছরে বিচার করা হবে।

সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে মারফুরূপে বর্ণিত আছে যে, এমন এক দিনে যা পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত বাশীর গিফারী (রাঃ)কে বলেনঃসে দিন তুমি কি করবে যখন জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে তিনশ বছর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে? আসমান থেকেও কোন খবর আসবে না এবং কোন হুকুমও করা হবে না?" একথা শুনে হযরত বাশীর (রাঃ) বলেনঃ আমি আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।" তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃতাহলে শিখে নাও! যখন তুমি তোমার বিছানায় শয়ন করতে যাবে তখন কিয়ামতের দিনের দুঃখ কষ্ট এবং হিসাব নিকাশের ভয়াবহতা হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে।

সুনানে আবী দাউদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কিয়ামত দিবসের দাড়ানোর জায়গায় সংকীর্ণতা হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, চল্লিশ বছর পর্যন্ত মানুষ আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকবে। কেউ কোন কথা বলবে না। পাপী পূণ্যবান সবাইকে ঘামের লাগাম ঘিরে রাখবে।

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বলেন যে, তারা একশ বছর দাঁড়িয়ে থাকবে।

সুনানে আবী দাউদে, সুনানে নাসাঈ এবং সুনানে ইবনে মাজায় হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদের নামায শুরু করতেন তখন দশবার আল্লাহু আকবার, দশবার আলহামদুলিল্লাহ, দশবার সুবহানাল্লাহ এবং দশবার আসতাগফিরুল্লাহ বলতেন। তারপর বলতেনঃ
اللهم اغفرلي واهدني وارزقني وعافني .
অর্থাৎহে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে হিদায়াত দান করুন, আমাকে রিযিক দিন এবং আমাকে নিরাপদে রাখুন।অতঃপর তিনি কিয়ামত দিবসের দাঁড়ানোর জায়গার সংকীর্ণতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
--
৭। না, না, কখনই না, পাপাচারীদের আমলনামা নিশ্চয়ই সিজ্জীনে থাকে;
৮। সিজ্জীন কি তা কি তুমি জান?
৯। ওটা হচ্ছে লিখিত পুস্তক।
১০। সেইদিন মন্দ পরিণাম হবে মিথ্যাচারীদের,
১১। যারা কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করে,
১২। আর সীমা লংঘনকারী মহাপাপী ব্যতীত, কেউই ওকে মিথ্যা বলতে পারে না। 
১৩। তার নিকট আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হলে সে বলেঃ এটা তো পূর্বকালীন কাহিনী!
১৪। না, এটা সত্য নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনের উপর মরিচারূপে জমে গেছে।
১৫। না, অবশ্যই সেই দিন তারা তাদের প্রতিপালক হতে অন্তরিত থাকবে;
১৬। অনন্তর নিশ্চয়ই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে;
১৭। তৎপর বলা হবেঃ এটাই তা যা তোমরা অস্বীকার করতে
--
আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, পাপাচারী ও মন্দ লোকদের ঠিকানা হলো সিজ্জীন। এ শব্দটি فعيل এর অনুরূপ ওজনে سجن থেকে নেয়া হয়েছে। سجن এই শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো সংকীর্ণতা। যেমন বলা হয় فسيق - شريب - خمير - سكير - ইত্যাদি। তারপর ওর আরো মন্দ গুণাবলীর বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হচ্ছেঃ তোমরা ওর প্রকৃত অবস্থা অবগত নও। ওটা হলো যন্ত্রণাদায়ক ও চিরস্থায়ী দুঃখ যাতনার স্থান।

বর্ণিত আছে যে, এই জায়গাটি সাত জমীনের তলদেশে অবস্থিত। হযরত বারা ইবনে আযিব (রাঃ)-এর সুদীর্ঘ হাদীসে পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, কাফিরদের রূহ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা (ফেরেশতাদেরকে) বলে থাকেনঃ তোমরা তার ফিতার সিজ্জীনে লিখে নাও। আর এই সিজ্জীন সাত জমীনের নীচে অবস্থিত। বলা হয়েছে যে, সিজ্জীন হলো সপ্তম জমীনের নীচে একটি সবুজ পাথর । আরো বলা হয়েছে যে, ওটা জাহান্নামের মধ্যস্থিত একটি গর্ত। ইমাম ইবনে জারীর একটি গারীব, মুনকার ও গায়ের সহীহ হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাতে রয়েছে যে, ফালাকহলো জাহান্নামের একটি কূপ যার মুখ বন্ধ রয়েছে। আর সিজ্জীন হলো উন্মুক্ত মুখ বিশিষ্ট একটি কূপ। সঠিক কথা এই যে, এর অর্থ হলো জেলখানার এক সংকীর্ণ স্থান। নীচের মাখলুকের মধ্যে সংকীর্ণতা রয়েছে। এবং উপরের মাখলুকের মধ্যে প্রশস্ততা রয়েছে। আকাশসমূহের মধ্যে প্রতিটি উপরের আকাশ ক্রমান্বয়ে প্রশস্ত এবং জমীনের মধ্যে প্রতিটি নীচের জমীন ক্রমান্বয়ে সংকীর্ণ। সপ্তম জমীনের মধ্যবর্তী কেন্দ্র সবচেয়ে সংকীর্ণ। কেননা, কাফিরদের প্রত্যাবর্তনের জায়গা সেই জাহান্নাম সবচেয়ে নীচে অবস্থিত। অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ - إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ
অর্থাৎঅতঃপর আমি তাকে হীনতাগ্রস্তদের হীনতমে পরিণত করি, কিন্তু তাদেরকে নয় যারা মু'মিন এবং সৎকর্ম পরায়ণ।” (৯৫ : ৫-৬) মোট কথা সিজ্জীন হলো একটা অতি সংকীর্ণ এবং নীচু জায়গা। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَإِذَا أُلْقُوا مِنْهَا مَكَانًا ضَيِّقًا مُقَرَّنِينَ دَعَوْا هُنَالِكَ ثُبُورًا
অর্থাৎএবং যখন তাদেরকে শৃংখলিত অবস্থায় ওর কোন সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা তথায় ধ্বংস কামনা করবে।" (২৫ ঃ ১৩)

كِتَابٌ مَّرْقُومٌ (ওটা হচ্ছে লিখিত পুস্তক), এটা এই সিজ্জীনের তাফসীর নয়, বরং এটা হলো তাদের জন্যে যা লিখিত হয়েছে তার তাফসীর। অর্থাৎ পরিণামে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তাদের এই পরিণাম লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। এতে এখন আর কম বেশী কিছু করা হবে না। বলা হচ্ছে। তাদের পরিণাম যে সিজ্জীনে হবে এটা আমার কিতাবে পূর্বেই লিখে দেয়া হয়েছে। এই লিখাকে যারা অবিশ্বাস করবে সেদিন তাদের মন্দ পরিণাম হবে। তারা জাহান্নামের অবমানকর শাস্তির সম্মুখীন হবে। মোটকথা, তাদের ধ্বংস ও সর্বনাশ সাধিত হবে। وَيْلٌ শব্দের অর্থ হলো সর্বনাশ, ধ্বংস এবং মন্দ পরিণাম। যেমন বলা হয়ঃ ويل لفلان অর্থাৎধ্বংস ও মন্দ পরিণাম অমুকের জন্যে।আর যেমন মুসনাদ ও সুনানের হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃঐ ব্যক্তির জন্যে মন্দ পরিণাম যে মানুষকে হাসাবার জন্য মিথ্যা কথা বলে থাকে। তার জন্যে মন্দ পরিণাম, তার জন্যে মন্দ পরিমাণ।

এরপর ঐ অবিশ্বাসী পাপী কাফিরদের সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ এরা এমন লোক যারা আখিরাতের শাস্তি এবং পুরস্কারকে অস্বীকার করতোবিবেক বুদ্ধির বিপরীত বলে পরকালের শাস্তি ও পুরস্কারকে বিশ্বাস করতো না। যেমন বলা হয়েছেঃ কিয়ামতকে মিথ্যা মনে করা। ঐ সব লোকেরই কাজ যারা নিজেদের কাজে সীমা ছাড়িয়ে যায়, হারাম কাজ করতে থাকে অথবা বৈধ কাজে সীমা অতিক্রম করে। যেমন পাপীরা নিজেদের কথায় মিথ্যা বলে, অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, গালাগালি করে ইত্যাদি। প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেন, যখন তাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয় তখন তারা বলেঃ এটা তো পূর্ববর্তীদের উপকথা। অর্থাৎ এগুলো পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ হতে সংকলন ও সংযোজন করা হয়েছে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
وَإِذَا قِيلَ لَهُم مَّاذَا أَنزَلَ رَبُّكُمْ قَالُواْ أَسَاطِيرُ الأَوَّلِينَ
অর্থাৎযখন তাদেরকে বলা হয়ঃ তোমাদের প্রতিপালক কি অবতীর্ণ করেছেন? তারা উত্তরে বলেঃ পূর্ববর্তীদের উপকথা।” (১৬ ঃ ২৪) আরও বলেনঃ
وَقَالُوا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ اكْتَتَبَهَا فَهِيَ تُمْلَى عَلَيْهِ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
অর্থাৎতারা বলেঃ এগুলো তো সে কালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে, এগুলো সকাল সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়।” (২৫ ঃ ৫) 

আল্লাহ তা'আলা জবাবে বলেনঃ প্রকৃত ঘটনা তাদের কথা ও ধারণার অনুরূপ নয়। বরং এ কুরআন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কালাম। এটা আল্লাহর অহী যা তিনি তাঁর বান্দাদের উপর নাযিল করেছেন। তবে হ্যা, তাদের অন্তরের উপর তাদের মন্দ কাজসমূহ পর্দা স্থাপন করে দিয়েছে। পাপ এবং অন্যায়ের আধিক্যের কারণে তাদের অন্তরে মরিচা পড়ে গেছে। কাফিরদের অন্তরের উপর رين হয় এবং পূণ্যবানদের অন্তরে غيم হয়। 

জামে তিরমিযী, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃবান্দা যখন পাপ করে তখন তার মনের কোণে একটা কালো দাগ পড়ে যায়। যদি তাওবা করে তবে ঐ দাগ মুছে যায়। আর যদি ক্রমাগত পাপে লিপ্ত থাকে তা হলে ঐ কালো দাগ প্রসার লাভ করে।

كَلَّا بَلْ رَانَ  দ্বারা এ কথাই বুঝানো হয়েছে। সুনানে নাসাঈর শব্দে কিছু রদ বদল রয়েছে। এ হাদীস মুসনাদে আহমদেও বর্ণিত হয়েছে। হযরত হাসান বসরী (রঃ) প্রভৃতি গুরুজন বলেন যে, পাপের উপর পাপ করলে মন অন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে ঐ মন মরে যায়। তারপর বলেন যে, এ সব লোক উপরোক্ত শাস্তিতে জড়িয়ে পড়ে আর আল্লাহর দীদার হতেও বঞ্চিত হয়।

ইমাম শাফিয়ী (রঃ) বলেনঃ এ আয়াতে প্রমাণ রয়েছে যে, মুমিন কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভে সম্মানিত হবে। ইমাম সাহেবের এই মন্তব্য সম্পূর্ণরূপে সত্য, আর আয়াতের সারমর্মেও এটাই বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ - إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ
অর্থাৎসেদিন কোন কোন মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে।” (৭৫: ২২-২৩) 

সহীহ ও মুতাওয়াতির হাদীসসমূহ দ্বারাও এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন ঈমানদার বান্দারা নিজেদের সম্মানিত প্রতিপালককে বেহেশতের মনোরম বাগানে বসে প্রত্যক্ষ করবে। হযরত হাসান (রঃ) বলেনঃ পর্দা সরে যাবে এবং মুমিন তাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে। কাফিরদেরকে পর্দার পিছনে সরিয়ে দেয়া হবে। মুমিন বান্দারা, প্রত্যহ সকাল সন্ধ্যায় পরওয়ারদিগারে আলামের দীদার লাভ করবে।

এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ অতঃপর তারা তো জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ কাফিররা শুধু আল্লাহর দীদার লাভ থেকেই বঞ্চিত হবে না, বরং তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অতঃপর তাদেরকে ধমক, ঘৃণা, তিরস্কার ও ক্রোধের সুরে বলা হবেঃ এটাই ঐ জায়গা যা তোমরা অস্বীকার করতে।
--
১৮। অবশ্যই পুণ্যবানদের আমলনামা ইল্লিয়্যীনে থাকবে,
১৯। ইল্লিয়্যীন কি তা কি তুমি  জান?
২০। (তা হচ্ছে) লিখিত পুস্তক।
২১। যারা আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত  তারা ওটা প্রত্যক্ষ করবে।
২২। পুণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে,
২৩। তারা সুসজ্জিত আসনে বসে অবলোকন করবে।
২৪। তুমি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি দেখতে পাবে, '
২৫। তাদেরকে মোহরযুক্ত বিশুদ্ধ মদিরা হতে পান করানো হবে,
২৬। ওর মোহর হচ্ছে কস্তুরীরআর থাকে যদি কারো কোন আকাঙ্খা বা কামনা তবে তারা এরই কামনা করুক।
২৭। ওর মিশ্রণ হবে তাসনীমের,
২৮। এটা একটি প্রস্রবণ, যা হতে নৈকট্য প্রাপ্ত ব্যক্তিরা পান করে।
--
পাপীদের পরিণাম অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থার বর্ণনা দেয়ার পর এবার পূণ্যবানদের সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ পুণ্যবানদের ঠিকানা হবে ইল্লিয়্যীন যা সিজ্জীনের সম্পূর্ণ বিপরীত। হযরত কাবকে (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই সিজ্জীন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, উত্তরে হযরত কা'ব (রাঃ) বলেন যে, সপ্তম জমীনকে সিজ্জীন বলা হয়। সেখানে কাফিরদের রূহ অবস্থান করবে। ইল্লিয়্যীন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ সপ্তম আসমানকে ইল্লিয়্যীন বলা হয় সেখানে মোমিনদের রুহ অবস্থান করবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এর অর্থ হলো জান্নাত। হযরত আওফী (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, মু'মিনদের আমলসমূহ আল্লাহ তা'আলার কাছে আকাশে রয়েছে। হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেনঃ এটা আরশের ডান পায়া

অন্য লোকেরা বলেনঃ এটা সিদরাতুল মুনতাহার কাছে রয়েছে। প্রকাশ থাকে যে, এ শব্দটি علو শব্দ হতে গৃহীত হয়েছে।علوশব্দের অর্থ হলো উঁচু। যে জিনিস যত উঁচু এবং বুলন্দ হবে তার প্রশস্ততা এবং প্রসারতাও ততো বেশী হবে। এ কারণেই তার বৈশিষ্ট্য এবং মর্যাদা বুঝানোর জন্যে বলা হয়েছেঃ তোমরা এর বিশেষত্ব সম্পর্কে অবগত নও কি? তারপর বিশেষ জোর দিয়ে বলা হয়েছেঃ মুমিনরা যে ইল্লিয়্যীনে থাকবে এটা নিশ্চিত ব্যাপার, কিতাবে তা লিখিত হয়েছে। ইল্লিয়্যীনের কাছে আকাশের সকল বিশিষ্ট ফেরেশতা গমন করে থাকেন। তারপর বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন এই পুণ্যবান লোকেরা চিরস্থায়ী নিয়ামত রয়েছে এমন বাগানসমূহে অবস্থান করবে এবং আল্লাহ তা'আলার রহমতসমূহ তাদের উপর বৃষ্টিধারার মত বর্ষিত হবে। মুমিন বান্দারা পালংকে বসে থাকবে এবং নিজেদের সাম্রাজ্য ধনমাল, মর্যাদা ও সম্মান প্রত্যক্ষ করবে। তাদের প্রতি প্রদত্ত আল্লাহ তা'আলার এসব নিয়ামত অফুরন্তকখনো তাতে কিছুমাত্র কমতী হবে না।তারা নিজেদের আরামালয়ে সম্মানিত উচ্চাসনে বসে আল্লাহ তা'আলার দীদার লাভ করে ধন্য হবে। এটা কাফির মুশরিকদের সাথে কৃত আচরণের সম্পূর্ণ বিপরীত। এদের প্রতি সব সময় আল্লাহর দীদারের অনুমতি থাকবে।

হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর এ বিষয় সংক্রান্ত একটি হাদীসের মর্মানুযায়ী সবচেয়ে নিম্নশ্রেণীর জান্নাতবাসীরা তাদের সম্পদ সাম্রাজ্য দু হাজার বছরের পথ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করবে এবং তার শেষ সীমার সকল জিনিস নিকটবর্তী জিনিসের মতই স্পষ্ট দেখতে পাবে। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতবাসীরা প্রতিদিন দু দুবার দীদারে ইলাহীর মাধ্যমে নিজেদের মন প্রফুল্ল রাখবে এবং দৃষ্টি আলোকিত করবে। কেউ তাদের চেহারার প্রতি তাকালে এক দৃষ্টিতেই তাদের পরিতৃপ্তি, আনন্দ, সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, সজীবতা, মর্যাদার অনুভূতি, বৈশিষ্ট্য এবং আরাম আয়েশের পরিচয় পেয়ে যাবে এবং তাদের গৌরব মর্যাদা ও সম্মান সম্পর্কে অবহিত হবে এবং অনুধাবন করবে যে, তারা সুখ সাগরে ডুবে আছে। তাদের মধ্যে জান্নাতী শারাব পরিবেশনের পর্ব চলতে থাকবেرَّحِيقٍ হলো জান্নাতের এক প্রকারের শারাব।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃযে ব্যক্তি কোন তৃষ্ণার্ত মুসলমানকে পানি পান করাবে, তাকে আল্লাহ তা'আলা  رَّحِيقٍ مَّخْتُومٍ  অর্থাৎ মোহরকৃত বিশুদ্ধ পানীয় হতে পান করাবেন। যে ব্যক্তি ক্ষুধার্ত কোন মুসলমানকে আহার করাবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাতের মেওয়া খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোন উলঙ্গ মুসলমানকে কাপড় পরিধান করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ রেশমী পোশাক পরিধান করাবেন।

خِتَامُهُ مِسْكٌ অর্থাৎ ওর মিশ্রণ হবে মিসক বা কস্তুরী । আল্লাহ তা'আলা তাদের জন্যে শারাবকে পবিত্র করেছেন এবং মিসকের মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন। এই অর্থও হতে পারে যে, সেই শারাবের পরিণাম হলো মিসক অর্থাৎ তাতে কোন প্রকার দুর্গন্ধ নেই, এবং মিসকের সুগন্ধি রয়েছে তাতে। ঠিক রূপোর রঙের মতই এ শারাব। তাতে রীতিমত সীলমোহর লাগানো থাকবে। সেই শারাব বা এমন সুগন্ধ যুক্ত হবে যে, পৃথিবীর কোন মানুষের একটা আঙ্গুল যদি সেই শারাবে লেগে যায় এবং তা সে বের করে নেয় তাহলে সেই সুগন্ধে সমগ্র পৃথিবী সুবাসিত হয়ে যাবে।ختام  শব্দের অর্থ সুগন্ধ বলেও বর্ণিত আছে।
এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক। অর্থাৎ প্রতিযোগিতাকারীদের সেই দিকে সর্বাত্মক মনোযোগ দেয়া উচিত। যেমন অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ لثل هذا فايعمل العاملون অর্থাৎযারা আমল করে তাদের এরকম জিনিসের জন্যেই আমল করা উচিত।

তাসনীমহলো জান্নাতের একটি উৎকৃষ্টতর শারাবের নাম। এটা এমন এক ঝর্ণা যা থেকে অগ্রাধিকারী ও নৈকট্যপ্রাপ্ত লোকেরা ক্রমাগত পান করবে। যারা ডান হাতে আমলনামা পাবে তারাও নিজেদের শারাবরাহীকএর সঙ্গে মিশ্রিত করে পান করবে।
--
২৯। যারা অপরাধী তারা মুমিনদেরকে উপহাস করতো
৩০। এবং তারা যখন মুমিনদের নিকট দিয়ে যেতো তখন চোখ টিপে ইশারা করতো
৩১। এবং যখন তারা আপনজনের নিকট ফিরে আসতো তখন তারা ফিরত উফুল্ল হয়ে,
৩২। এবং যখন তাদেরকে দেখতো তখন বলতোঃ এরাই তো পথভ্রষ্ট,
৩৩। তাদেরকে তো এদের সংরক্ষকরূপে পাঠানো হয়নি!
৩৪। আজ তাই, মুমিনগণ উপহাস করছে কাফিরদেরকে,
৩৫। সুসজ্জিত আসন হতে তাদেরকে অবলোকন করে।
৩৬। কাফিররা তাদের কৃতকর্মের ফল পেলো তো?
--
আল্লাহ তা'আলা পাপীদের সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, পৃথিবীতে তো তারা খুব বাহাদুরী দেখায়, মুমিনদেরকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে, চলাফেরার সময় তিরস্কার ভৎসনা করে, ব্যাঙ্গাত্মক উক্তি করে এবং আরও নানা প্রকার অবমাননাকর উক্তি করে নিজেদের দলের লোকদের কাছে গিয়ে তারা আপত্তিজনক নানা কথা বানিয়ে বলে, যা খুশী তাই করে বেড়ায় কুফরীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলমানদেরকে নানা রকম কষ্ট দেয়। মুসলমানরা তাদের কথায় কান না দেওয়ায় তারা। মুসলমানদেরকে ভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট বলে আখ্যায়িত করে।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তাদেরকে মুমিনদের জন্য দারোগা করে পাঠানো হয়নি। কাজেই কাফিরদের এসব বলার কোনই প্রয়োজন নেই। কাফিরদের কি হয়েছে যে, তারা মুমিনদের পিছনে লেগে থাকে এবং ব্যাঙ্গাত্মক কথাবার্তা বলে বেড়ায়? যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ
قَالَ اخْسَؤُوا فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ - إِنَّهُ كَانَ فَرِيقٌ مِّنْ عِبَادِي يَقُولُونَ رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ - فَاتَّخَذْتُمُوهُمْ سِخْرِيًّا حَتَّى أَنسَوْكُمْ ذِكْرِي وَكُنتُم مِّنْهُمْ تَضْحَكُونَ - إِنِّي جَزَيْتُهُمُ الْيَوْمَ بِمَا صَبَرُوا أَنَّهُمْ هُمُ الْفَائِزُونَ
অর্থাৎতোরা হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলিস না। আমার বান্দাদের মধ্যে একদল ছিল যারা বলতোঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু। কিন্তু তাদেরকে নিয়ে তোমরা এতো ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে যে, ওটা তোমাদেরকে আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল। তোমরা তো তাদেরকে নিয়ে হাসি ঠাট্টাই করতে। আমি আজ তাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হলো সফলকাম।” (২৩ ঃ ১০৮-১১১) এ জন্যেই এখানে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আজ কিয়ামতের দিন মুমিনগণ কাফিরদেরকে উপহাস করছে ও সুসজ্জিত আসন হতে তাদেরকে অবলোকন করছে।

এটা স্পষ্টভাবে একথাই প্রমাণ করে যে, এ মুমিনরাই ছিল সুপথ প্রাপ্ত, এরা পথভ্রষ্ট ছিল না, বরং তোমরা নিজেরাই ছিলে পথভ্রষ্ট। অথচ তোমরা এদেরকে পথভ্রষ্ট বলতে। প্রকৃত পক্ষে এ মুমিনগণ ছিল আল্লাহর বন্ধু এবং তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্ত। এ জন্যেই আজ আল্লাহর দীদার এদের চোখের সামনে রয়েছে, এরা আজ আল্লাহর মেহমান এবং তার দেয়া মর্যাদাসিক্ত উচ্চাসনে সমাসীন।

এরপর মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এসব কাফির দুনিয়ার এই মুসলমানদের সাথে যে সব দুর্ব্যবহার করেছে, আজ কি তারা তাদের সেই সব ব্যবহারের পুরোপুরি প্রতিফল পেয়েছে? অবশ্যই পেয়েছে। তাদের পরিহাসের পরিবর্তে আজ তারা পরিহাস লাভ করেছে। এ কাফিররা যে সব মুসলমানকে মর্যাদাহীন বলতো, আল্লাহ আজ তাদেরকে সম্মানিত করেছেনমোটকথা সমস্ত মানুষই আজ কিয়ামতের দিন নিজেদের কৃতকর্মের পুরোপুরি প্রতিফল প্রাপ্ত হয়েছে। তাদের কাজের বিনিময় তারা পেয়ে গেছে।
--
(সূরাঃ মুতাফফিফীন এর তাফসীর সমাপ্ত)
--
টীকাঃ
১. এটা ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
. এ হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ), ইমাম বুখারী (রঃ) এবং ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
.  এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
. এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
. এহাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন।


No comments:

Post a Comment