সূরাঃ নাসর/ ১১০, (মাদানী) | (আয়াতঃ৩, রুকূঃ১)




পূর্বেই হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, এই সূরাটি কুরআন কারীমের এক চতুর্থাংশের সমতুল্য।

হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)  হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উবাহ (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞেস করেনঃসর্বশেষ কোন সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে তা কি তুমি জান?” উত্তরে তিনি বললেনঃহ্যা, সূরা ইযাজাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু' (সর্বশেষ অবতীর্ণ হয়েছে।)হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)  তখন বললেনঃতুমি সত্য বলেছে।

 হযরত ইবনে উমার (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আইয়ামে তাশরীকের (১১ই, ১২ইও ১৩ই যিল হজ্ব তারিখের) মধ্যভাগে (إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ) সূরাটি রাসূলুল্লাহ ()-এর উপর অবতীর্ণ হলে তিনি বুঝতে পারেন যে, এটা বিদায়ী সূরা। সুতরাং তখনই তিনি সওয়ারী তৈরি করার নির্দেশ দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ () সওয়ারীতে আরোহণ করলেন। তারপর তিনি তার সুপ্রসিদ্ধ খুৎবাহ প্রদান করলেন।

হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যখন (إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْح), সূরা অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ্ () হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) -কে ডেকে বলেনঃআমার পরলোক গমনের খবর এসে গেছে।এ কথা শুনে হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه)  কাঁদতে শুরু করলেন।

তারপরই তিনি হাসতে লাগলেন। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃআমার আব্বার () পরলোক গমনের সময় নিকটবর্তী হওয়ার খবর শুনে আমার কান্না এসেছিল। কিন্তু আমার কান্নার সময় তিনি আমাকে বললেনঃতুমি ধৈর্য ধারণ করে। আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে তুমিই সর্ব প্রথম আমার সাথে মিলিত হবে।

(করুণাময় কৃপানিধান আল্লাহর নামে শুরু করছি)।
১। যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়।
২। এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে।
৩। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের কৃতজ্ঞতাবাচক পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং তাঁর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনিতো সর্বাপেক্ষা অধিক অনুতাপ গ্রহণকারী।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃবদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বয়স্ক মুজাহিদদের সাথে হযরত উমার (رضي الله عنه)  আমাকেও শামিল করে নিতেন। এ কারণে কারো কারো মনে সম্ভবতঃ অসন্তুষ্টির ভাব সৃষ্টি হয়ে থাকবে। একদা তাদের মধ্যে একজন আমার সম্পর্কে মন্তব্য করলেনঃ সে যেন আমাদের সাথে না থাকে। তার সমবয়সী ছেলে আমাদেরও তো রয়েছে।তার এ মন্তব্য শুনে হযরত উমার (رضي الله عنه)  তাঁকে বললেনঃ তোমরা তো তাকে খুব ভাল রূপেই জান!একদিন তিনি সবাইকে ডাকলেন এবং আমাকেও স্মরণ করলেন আমি বুঝতে পারলাম যে, আজ তিনি তাদেরকে কিছু দেখাতে চান। আমরা সবাই হাজির হলে তিনি সকলকে জিজ্ঞেস করলেনঃ (إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْح) - সূরাটি সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি (অর্থাৎ এ সূরাটি কিসের ইঙ্গিত বহন করছে)।কেউ কেউ বললেনঃএ সূরায় আল্লাহ তা'আলার গুণগান করার। জন্যে এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্যে আমাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা'আলার সাহায্য এলে এবং আমাদের বিজয় সূচিত হলেই যেন আমরা এইরূপ করি। কেউ কেউ আবার সম্পূর্ণ নীরব থাকলেন, কিছুই বললেন না। হযরত উমার (رضي الله عنه)  তখন আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃতোমার মতামতও কি এদের মতই ?”  আমি উত্তরে বললামঃ না, বরং আমি এই বুঝেছি এ সূরায় রাসূলুল্লাহর () পরলোক গমনের ইঙ্গিত রয়েছে। তাঁকে এটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তার ইহলৌকিক জীবন শেষ হয়ে এসেছে। সুতরাং তিনি যেন তাঁর প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করেন ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন। একথা শুনে হযরত উমার (رضي الله عنه)  বললেনঃআমিও এটাই বুঝেছি।

এ সূরা অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ () বললেনঃ “(এ বছরই আমার ইন্তেকাল হবে) আমাকে আমার মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়েছে।  মুজাহিদ (রঃ), আবুল আলিয়া (রঃ), যহহাক (রঃ) প্রমুখ গুরুজনও এই তাফসীর বর্ণনা করেছেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ () মদীনায় অবস্থান করছিলেন, একদা তিনি বলেনঃআল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান! আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে পড়েছে। ইয়ামনের অধিবাসীরা এসে গেছে।তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলোঃহে আল্লাহর রাসূল ()! ইয়ামনবাসীরা কেমন লোক?” তিনি উত্তরে বললেনঃতারা কোমল প্রাণ ও পরিচ্ছন্ন স্বভাবের অধিকারী। ঈমান, বুদ্ধিমত্তা এবং হিকমত এ সবই ইয়ামনবাসীদের রয়েছে।

হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, যেহেতু এ সূরাটিতে রাসূলুল্লাহর () পরলোকগমনের সংবাদ ছিল সেহেতু সূরাটি অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ () আখেরাতের কাজে পূর্বের চেয়ে অধিক মনোযোগী হন। অতঃপর তিনি বলেনঃআল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে গেছে এবং ইয়ামনবাসী এসে পড়েছে।তখন একটি লোক জিজ্ঞেস করলেনঃহে আল্লাহর রাসূল ()! ইয়ামনবাসীরা কি (প্রকৃতির লোক)?” উত্তরে তিনি বললেন!তাদের অন্তর কোমল, স্বভাব নম্র এবং তারা ঈমান ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী।

 হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত আছে যে, সূরা সমূহের মধ্যে পুরো সূরা অবতীর্ণ হওয়ার দিক থেকে (إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْح) এ সূরাটিই সর্বশেষ সূরা।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْح)
এ সূরাটি অবতীর্ণ হলে রাসূলুল্লাহ () তা শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন, অতঃপর বলেনঃসব মানুষ এক দিকে এবং আমি ও আমার সাহাবীরা এক দিকে। জেনে রেখো যে, মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরত নেই, তবে রয়েছে জিহাদ এবং নিয়ত।মারওয়ানকে হযরত আবু সাঈদ (رضي الله عنه)  এ হাদীসটি শোনালে তিনি বলে ওঠেনঃতুমি মিথ্যা বলছো ঐ সময় মারওয়ানের সাথে তাঁর মজলিসে হযরত রাফে ইবনে খাদীজ (রঃ) এবং হযরত যায়েদ ইবনে সাবিতও (رضي الله عنه)  উপবিষ্ট ছিলেন। হযরত আবু সাঈদ (رضي الله عنه)  তাঁদের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন!এঁরাও এ হাদীসটি জানেন এবং বর্ণনা করতে পারেন। কিন্তু একজন নিজের নেতৃত্ব চলে যাওয়ার আশংকায় এবং অপরজন যাকাত আদায়ের পদমর্যাদা থেকে বরখাস্ত হওয়ার ভয়ে এটা বর্ণনা করছেন না।" একথা শুনে মারওয়ান হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) কে চাবুক মারতে উদ্যত হলে উভয় সাহাবী মারওয়ানকে লক্ষ্য করে বলেনঃশোনো মারওয়ান! হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه)  সত্য কথাই বলেছেন।

হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ () মক্কা বিজয়ের দিন বলেনঃহিজরত আর অবশিষ্ট নেই, তবে জিহাদ এবং নিয়ত বাকি রয়েছে। তোমাদেরকে যখন চলতে বলা হবে তখন তোমরা উঠে দাড়িয়ে চলতে শুরু করবে।১০
তবে হ্যা, এটাও মনে রাখতে হবে যে, যে সব সাহাবী (رضي الله عنه)  হযরত উমারের (رضي الله عنه)  প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেনঃযখন আল্লাহ তা'আলা আমাদের উপর শহর ও দূর্গের বিজয় দান করবেন এবং আমাদেরকে সাহায্য করবেন তখন আমরা যেন তার প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করি ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি, এ সূরায় এ নির্দেশই তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন। তাছাড়া আমরা যেন নামায আদায় করি ও নিজেদের পাপের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করি, এ নির্দেশও আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। তাদের এ অর্থ ও তাফসীরও খুবই সুন্দর ও বিশুদ্ধ, এতে কোন সন্দেহ নেই।

 রাসূলুল্লাহ () মক্কা বিজয়ের দিন চাশতের আট রাকআত নামায আদায় করেছিলেন, যদিও কেউ কেউ বলেন যে, ওটা ছিল চাশতের নামায, কিন্তু আমরা জানি যে, তিনি চাশতের নামায নিয়মিতভাবে আদায় করতেন না। তাছাড়া ঐসময় ব্যস্ততা ছিল এবং কাজকর্মও অনেক ছিল। তিনি ছিলেন মুসাফির, এ অবস্থায় কি করে তিনি চাশতের নামায পড়তে পারেন? এছাড়া রাসূলুল্লাহ () মক্কা বিজয়ের সময়ে মক্কা শরীফে রমযানের শেষ পর্যন্ত উনিশ দিন অবস্থান করেছিলেন। ঐ সময়ে তিনি ফরয নামাযও কসর করেছিলেন। তিনি রোযাও রাখেননি। তাঁর সঙ্গীয় প্রায় দশ হাজার মুসলমান সবাই এ নিয়ম পালন করেছিলেন। এতে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ () আট রাকআত নামায মক্কা বিজয়ের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ছিল। এ কারণেই সেনাবাহিনী প্রধান বা সমকালীন ইমামের জন্যে কোন শহর জয় করার সাথে সাথে ঐ শহরে আট রাকআত নামায আদায় করা মুস্তাহাব।

হযরত সা'দ ইবনে অক্কাস (رضي الله عنه)  মাদায়েন বিজয়ের দিন অনুরূপ আট রাকআত নামায আদায় করেছিলেন। এই আট রাকআত নামায দুই রাকআত করে আদায় করতে হবে। কারো কারো মতে আট রাকআতে একবার সালাম ফিরালেই চলবে। অর্থাৎ একবারই সালাম ফিরানোর নিয়তে আট রাকআত নামায পড়া যাবে। কিন্তু সুনানে আবি দাউদে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ () এ নামায প্রতি দুই রাকআতে সালাম ফিরিয়ে আদায় করেছিলেন। অন্যান্য তাফসীরও বিশুদ্ধ । যেমন, ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)  প্রমুখ গুরুজন বলেছেন যে, এ সূরায় রাসূলুল্লাহ ()কে তার ইন্তেকালের সংবাদ দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ হে নবী ()! যে মক্কা থেকে কাফিররা তোমাকে চলে যেতে বাধ্য করেছে, সেই মক্কা বিজয় যখন তুমি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবে, নিজের পরিশ্রমের ফলে যখন দেখতে পাবে, আরো যখন দেখতে পাবে যে, জনগণ আল্লাহর ধর্মে দলে দলে প্রবেশ করছে তখন তুমি স্বীয় প্রতিপালকের তাসবীহ ও তাহমীদ পাঠ করবে এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তুমি পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকো। মনে রেখো যে, তোমার ইহকালীন দায়িত্ব সম্পন্ন হয়েছে। সুতরাং এখন পরকালের প্রতি মনোযোগী হও। সেখানে তোমার জন্যে বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে। তোমার মেহমানদারী স্বয়ং আমিই করবোকাজেই আমার রহমত ও কুদরতের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে অধিক পরিমাণে আমার প্রশংসা করো, তাওবা ইসতিগফার করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুল করে থাকেন।

সহীহ বুখারীতে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ () তাঁর রুকু ও সিজদায় নিম্নলিখিত তাসবীহ অধিক পরিমাণে পাঠ করতেনঃ
سبهنك اللهم ربن وبحمدك اللهم اغفرلى
অর্থাৎহে আল্লাহ! আপনি মহাপবিত্র এবং আপনার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন! রাসূলুল্লাহ () কুরআন কারীমের (فَسَبِّحْ ) এ আয়াতের উপর অধিক পরিমাণে আমল করতেন।  অন্য এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ () তাঁর শেষ জীবনে নিম্নলিখিত কালেমাগুলো অধিক পরিমাণে পাঠ করতেনঃ
سبحان الله وبحمده استغفر الله واتوب اليه.
অর্থাৎআল্লাহ মহাপবিত্র, তার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকট তাওবা করছি।

তিনি আরো বলতেনঃআমার প্রতিপালক আমাকে আদেশ দিয়ে রেখেছেনঃ যখন আমি দেখতে পাই যে, মক্কা বিজয় অত্যাসন্ন এবং দলে দলে লোক ইসলামে প্রবেশ করছে তখন যেন আমি এ কালেমা অধিক পরিমাণে পাঠ করি। সুতরাং আল্লাহর রহমতে আমি মক্কা বিজয় প্রত্যক্ষ করেছি। এ কারণে এখন (মনোযোগ সহকারে) এ কালেমা নিয়মিত পাঠ করছি।১১

তাফসীরে ইবনে জারীরে হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত আছে যে, শেষ বয়সে রাসূলুল্লাহ () উঠতে বসতে চলতে ফিরতে এবং আসতে যেতে নিম্নের তাসবীহ পড়তে থাকতেনঃ
(سبحان الله وبحمده) ' অর্থাৎআল্লাহ মহাপবিত্র এবং তাঁর জন্যেই সমস্ত প্রশংসা।" হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه)  বলেনঃআমি একবার এর কারণ জিজ্ঞেস করলে, রাসূলুল্লাহ () সূরা নাস্র তিলাওয়াত করেন এবং বলেনঃআল্লাহপাক আমাকে এরকমই আদেশ দিয়েছেন।

 মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে যে, এ সূরা অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ () নামাযে প্রায়ই এ সূরা তিলাওয়াত করতেন এবং রুকূতে তিনবার নিম্নের দুআ পড়তেনঃ
سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفرلي إنك أنت التواب الرجيم
অর্থাৎহে আল্লাহ! আপনি মহা পবিত্র। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনারই জন্যে সমস্ত প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবা কবুলকারী, দয়ালু। 

বিজয় অর্থে এখানে মক্কা বিজয়কে বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কোন মতানৈক্য নেই। আরবের সাধারণ গোত্রগুলোর মধ্যে ব্যাপারে কোনই মতানৈক্য হয়নি। আরবের সাধারন গোত্রগুলো অপেক্ষা করছিল যে, যদি মুহাম্মদ () স্বজাতির উপর জয়যুক্ত হন এবং মক্কা তাঁর পদানত হয় তবে তিনি যে সত্য নবী এব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ থাকবে না।

আল্লাহ তা'আলা যখন তাঁর প্রিয় নবী ()কে মহাবিজয় দান করলেন তখন এরা সবাই দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করলোএরপর দু'বছর যেতে যেতেই সমগ্র আরব ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করলোপ্রত্যেক গোত্রের উপর ইসলামের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলোসমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য।

সহীহ বুখারীতেও হযরত আমর ইবনে সালমার (رضي الله عنه) এ উক্তি বিদ্যমান রয়েছে যে, মক্কা বিজয়ের সাথে সকল গোত্র ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলোতারা ইসলাম গ্রহণের জন্যে অপেক্ষা করছিল এবং নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলঃ নবী মুহাম্মদ ()কে এবং তার স্বজাতিকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও। যদি মুহাম্মদ () সত্য নবী হয়ে থাকেন তবে নিজের জাতির উপর অবশ্যই জয়যুক্ত হবেন এবং মক্কার উপর তার বিজয় পতাকা উড়বে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বল আলামীনের প্রাপ্য।

মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে যে, হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহর এক প্রতিবেশী সফর থেকে ফিরে আসার পর হযরত জাবির (رضي الله عنه)  তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। সেই প্রতিবেশী মুসলমানদের মধ্যে ভেদাভেদ, দ্বন্দ্ব-কলহ এবং নতুন নতুন বিদআতের কথা ব্যক্ত করলে হযরত জাবির (رضي الله عنه) -এর চক্ষুদ্বয় অশ্রু সজল হয়ে উঠলোতিনি কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বললেনঃআমি সরদারে দো জাহান, শাফীউল মুনিবীন, রহমাতুল লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ ()-এর মুখে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃলোকেরা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে বটে, কিন্তু শীঘ্রই তারা দলে দলে এই দ্বীন থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করবে।
--------------------------------------------
(সূরাঃ নাসর-এর তাফসীর সমাপ্ত)
-------------------------------------------------------
১. এ হাদীসটি ইমাম নাসায়ী (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
২. এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর বাযযার (রঃ) এবং হাফিয বারহাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
৩. এহাদীসটি ইমাম বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানে নাসায়ীতে এটা বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু তাতে হযরত ফাতিমার (রঃ) উল্লেখ করা হয়নি।
. এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
. এ হাদীসটি মুসনাদে আহমদে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত হয়েছে।
. এ হাদসিটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
, এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
. এ হাদীসটিও ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
. এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীস নির্ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
১০. এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) তাখরীজ করেছেন।
. এ হাদীসটি মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে।

No comments:

Post a Comment