হযরত বারা ইবনে আযিব
(রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “নবী করীম (সঃ) তাঁর
এক সফরে দু'রাকআত নামাযের কোন
এক রাকআতে সূরা তীন পাঠ করছিলেন। আমি তার চেয়ে মধুর ও উত্তম কণ্ঠস্বর অথবা কিরআত
আর কারো শুনিনি।
--
করুণাময়, কৃপানিধান আল্লাহর
নামে শুরু করছি।
১। শপথ ‘তীন’ ও ‘যায়তূন' এর,
২। শপথ ‘সিনাই' পর্বতের
৩। এবং শপথ এই নিরাপদ বা শান্তিময় নগরীর,
৪। আমি তো সৃষ্টি করেছি
মানুষকে সুন্দরতম গঠনে,
৫। অতঃপর আমি তাকে
হীনতাগ্রস্তদের হীনতমে পরিণত করি।
৬। কিন্তু তাদেরকে নয়
যারা মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণ; তাদের জন্যে তো আছে
নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।
৭। সুতরাং এরপর কিসে তোমাকে কর্মফল সম্বন্ধে অবিশ্বাসী করে?
৮। আল্লাহ কি বিচারকদের
মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?
--
এখানে তাফসীরকারগণ বহু
উক্তির উপর মতভেদ করেছেন। কারো কারো মতে তীন' দ্বারা দামেস্কের মসজিদকে বুঝানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, ‘তীন’ হলো সরাসরি দামেস্ক
শহর। অন্য কেউ বলেন যে, ওটা হলো জুদী
পাহাড়ে অবস্থিত হযরত নূহের (আঃ) মসজিদ। হযরত মুজাহিদের (রঃ) মতে এটা হলো সাধারণ
আনজীর বা ডুমুর জাতীয় ফল।
যায়তুনের অর্থ ও
বিভিন্নভাবে করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, ওটা হলো বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদ। অন্য কারো মতে যায়তুন হলো ঐ ফল যাকে চিপে
রস অর্থাৎ তৈল বের করা হয়।
তুরে সীনীন হলো ঐ পাহাড়
যেখানে হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহ তা'আলার সাথে কথা বলেছিলেন।
(الْبَلَدِ الْأَمِينِ)
দ্বারা মক্কা শরীফকে বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই।
কেউ কেউ বলেন যে, এই তিন জায়গায়
তিনজন বিশিষ্ট নবীকে (আঃ) প্রেরণ করা হয়েছিল। তুরে সীনীন এর অর্থ হলো তুরে সায়না
অর্থাৎ সিনাই পাহাড়। এই পাহাড়ে আল্লাহ্ জাল্লাজালালুহু হযরত মুসা (আঃ)-এর সাথে
বাক্য বিনিময় করেছেন। বালাদুল আমীন হলো মক্কা মুআযযামা, যেখানে বিশ্বনবী
হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) পাঠানো হয়েছে। তাওরাতের শেষেও এ তিনটি জায়গার নাম উল্লিখিত
রয়েছে। তাতে রয়েছে যে, তূরে সায়না থেকে
আল্লাহ তা'আলা এসেছেন অর্থাৎ
তিনি হযরত মূসার (আঃ) সাথে কথা বলেছেন আর সাঈর অর্থাৎ বায়তুল মুকাদ্দাসের পাহাড়
থেকে তিনি নুর চমকিত করেছেন। অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ)কে সেখানে প্রেরণ করেছেন এবং
ফারানের শীর্ষে তিনি উন্নীত হয়েছেন অর্থাৎ মক্কার পাহাড় থেকে হযরত মুহাম্মদ
(সঃ)কে প্রেরণ করেছেন। অতঃপর এই তিনজন বিশিষ্ট নবীর ভাষা এবং সত্তা সম্পর্কে
পর্যায়ক্রমেই উল্লেখ করা হয়েছে।
এইসব শপথের পর আল্লাহ
তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ নিশ্চয়ই
আমি মানুষকে অত্যন্ত সুন্দর ছাঁচে ঢালাই করেছি, অতঃপর তাকে আমি অধঃপতিত হীন অবস্থার লোকদের চেয়েও হীনতম করে দিই। অর্থাৎ
জাহান্নামের অধিবাসী করে দিই, যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্য না করে থাকে । এ কারণেই যারা
ঈমান এনেছে ও ভাল কাজ করেছে তাদেরকে পৃথক করে নেয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা অতি
বৃদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার কথা বুঝানো হয়েছে। ইকরামা (রঃ) বলেন যে, যে ব্যক্তি কুরআন
জমা করেছে সে বার্ধক্য ও হীন অবস্থায় উপনীত হবে না। ইবনে জারীর (রঃ) এ কথা পছন্দ করেছেন। কিন্তু অনেক ঈমানদারও তো বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হন। কাজেই সঠিক কথা হলো
ওটাই যা উপরে বর্ণিত হয়েছে। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
والعصر . ا الإنسان لفى خسر . إلا الذين آمنوا
وعملوا الصالحات .
অর্থাৎ “মহাকালের শপথ!
মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও
সঙ্কর্ম করে।” (১০৩ : ১-৩) ইতিপূর্বেও এরূপ উক্তি উল্লিখিত হয়েছে।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ
বলেনঃ হে মানুষ! তুমি যখন তোমার প্রথমবারের সৃষ্টি সম্পর্কে জানো তখন শাস্তি ও
পুরস্কারের দিনের আগমনের কথা শুনে এবং পুনরায় জীবিত হওয়ার অর্থাৎ পুনরুত্থানের
কথা শুনে এটাকে বিশ্বাস করছে না কেন? এ অবিশ্বাসের কারণ কি? কোন্ বস্তু তোমাকে
কিয়ামত সম্পর্কে অবিশ্বাসী করেছে? যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন তাঁর পক্ষে পুনরায় সৃষ্টি করা কি কঠিন কাজ?
হযরত মুজাহিদ (রঃ) একবার হযরত ইবনে আব্বাসকে (রাঃ)
জিজ্ঞেস করেন “এখানে কি হযরত
মুহাম্মদ (সঃ)কে বুঝানো হয়েছে?" উত্তরে তিনি বলেনঃ “আল্লাহর নিকট
আশ্রয় চাচ্ছি! এখানে শুধু সাধারণ মানুষকেই বুঝানো হয়েছে।”
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তিনি কি বিচারকদের
মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? তিনি কারো প্রতি
কোন প্রকার যুলুম বা অত্যাচার করেন না। তিনি অবিচার করেন না। এ কারণেই তিনি
কিয়ামত বা শেষ বিচারের দিনকে অবশ্যই আনয়ন করবেন এবং সেই দিন তিনি প্রত্যেক যালিম, অত্যাচারীর নিকট
থেকে যুলুম অত্যাচারের প্রতিশােধ গ্রহণ করবেন।।
ইতিপূর্বে হযরত আবু
হুরাইরা (রাঃ) হতে মার’ রূপে একটি হাদীস গত
হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)
বলেছেনঃ “যখন তোমাদের মধ্যে
কেউ (وَالتِّينِ
وَالزَّيْتُونِ) সূরাটি পাঠ করবে এবং সূরার শেষের (أَلَيْسَ
اللَّهُ بِأَحْكَمِ الْحَاكِمِينَ)
পর্যন্ত পৌঁছবে তখন যেন সে বলেঃ
بلى وانا على ذلك من الشهدين .
অর্থাৎ “হ্যা, এবং আমিও এর উপর
সাক্ষ্যদাতাদের মধ্যে একজন।”
--
(সূরাঃ তীন এর তাফসীর সমাপ্ত)
No comments:
Post a Comment