--
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর
নামে শুরু করছি।
১। সে কুঞ্চিত করলো এবং
মুখ ফিরিয়ে নিলো,
২। যেহেতু তার নিকট এক
অন্ধ আগমন করেছিল।
৩। তুমি কেমন করে জানবে
সে হয় তো পরিশুদ্ধ হতো,
৪। অথবা উপদেশ গ্রহণ করতে, ফলে উপদেশ তার
উপকারে আসতো।
৫। পক্ষান্তরে যে পরওয়া
করে না,
৬। তুমি তার প্রতি মনোযোগ দিয়েছে।
৭। অথচ সে নিজে পরিশুদ্ধ
না হলে তোমার কোন দায়িত্ব নেই,
৮। অন্যপক্ষে যে তোমার নিকট ছুটে আসলো,
৯। তার সে সশংকচিত্ত,
১০। তুমি তাকে অবজ্ঞা করলে!
১১। না, এই আচরণ অনুচিত, এটা তো উপদেশবাণী;
১৩। ওটা মহিমান্বিত
পত্রসমূহে (লিখিত)
১৪। (এবং) উন্নত, পূত-পবিত্র
১৫। লেখকদের হস্তে
(সুরক্ষিত)
১৬। (ঐ লেখকগণ) মহৎ ও সৎ।
--
বহু তাফসীরকার লিখেছেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) কুরায়েশ নেতাদেরকে ইসলামের শিক্ষা, সৌন্দর্য ও আদর্শ
সম্পর্কে অবহিত করছিলেন এবং সেদিকে গভীর মনোযোগ দিয়েছিলেন। তিনি আশা করছিলেন যে, হয়তো আল্লাহ তা'আলা তাদেরকেই ইসলাম
গ্রহণের সৌভাগ্য দান করবেন। ঐ সময়ে হঠাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মি মাকতুম (রাঃ) নামক
এক অন্ধ সাহাবী তাঁর কাছে এলেন। ইবনে উম্মি মাকতুম (রাঃ) বহু পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ
করেছিলেন। প্রায়ই তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে হাযির থাকতেন এবং ধর্মীয় বিষয়ে
শিক্ষা গ্রহণ করতেন। মাসআলা মাসায়েল জিজ্ঞেস করতেন। সেদিনও তাঁর আচরিত অভ্যাসমত
এসে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন এবং সামনে অগ্রসর হয়ে তাঁর
প্রতি তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু মহানবী (সঃ) তখন একটা অতি
গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এ জন্যে তিনি আব্দুল্লাহ্ (রাঃ)-এর প্রতি
তেমন মনোযোগ দিলেন না। তাঁর প্রতি তিনি কিছুটা বিরক্তও হলেন। ফলে তার কপাল কুঞ্চিত
হলো। এরপর এই আয়াতসমূহ
অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় রাসূল
(সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ হে রাসূল (সঃ)! তোমার উন্নত মর্যাদা ও মহান চরিত্রের জন্যে এটা শোভনীয় নয় যে, একজন অন্ধ আমার
ভয়ে তোমার কাছে ছুটে এলো, ধর্ম সম্পর্কে কিছু
জ্ঞান লাভের আশায়, অথচ তুমি তার দিক
হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অহংকারী ও উদ্ধতদের প্রতি মনোযোগী হয়ে গেলে? পক্ষান্তরে সে
ব্যক্তি তোমার কাছে এসেছিল, তোমার মুখ থেকে
আল্লাহর বাণী শুনে পাপ ও অন্যায় হতে বিরত থাকার সম্ভাবনা ছিল তার অনেক বেশী। সে
হয়তো ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনের জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করতো। অথচ তুমি সেই অহংকারী ধনী লোকদের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ
নিবদ্ধ করলে এ কেমনতর কথা? ওদের সৎ পথে নিয়ে
আসতেই হবে এমন দায়িত্ব তো তোমার উপর নেই। ওরা যদি তোমার কথা না মানে তবে তাদের
দুষ্কৃতির জন্যে তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে না।
অর্থাৎ ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে বড়-ছোট, ধনী-গরীব, সবল-দুর্বল, আযাদ-গোলাম এবং
পুরুষ ও নারী সঝই সমান। তুমি সবাইকে সমান নসীহত করবে। হিদায়াত আল্লার হাতে
রয়েছে। আল্লাহ যদি কাউকে সৎ পথ থেকে দূরে রাখেন তবে তার রহস্য তিনিই জানেন, আর যদি কাউকে সৎপথে
নিয়ে আসেন সেটার রহস্যও তিনিই ভাল জানেন।
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উম্মি মাকতুম (রাঃ) যখন এসেছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)
উবাই ইবনে খালফের সাথে কথা বলছিলেন। এরপর থেকে নবী (সঃ) হযরত ইবনে উম্মি মাকতুম
(রাঃ)-কে খুবই সম্মান করতেন এবং তাঁকে সাদর সম্ভাষণ জানাতেন।
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেনঃ আমি ইবনে উম্মি মাকতূম (রাঃ)-কে কাদেসিয়ার
যুদ্ধে দেখেছি যে, তিনি বর্ম পরিহিত
অবস্থায় কালো পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ যখন ইবনে উন্মি মাকতুম (রাঃ) এসে রাসূলুল্লাহ্
(সঃ)-কে বললেনঃ “আমাকে দ্বীনের কথা
শিক্ষা দিন”, তখন কুরায়েশ নেতৃবৃন্দ রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর সামনে উপস্থিত ছিল। রাসূলুল্লাহ্
(সঃ) তাদেরকে ধর্মের কথা শোনাচ্ছিলেন আর জিজ্ঞেস করছিলেনঃ “বল দেখি, আমার কথা সত্য
কি-না?” তারা উত্তরে বলছিলঃ “জ্বী, আপনি যথার্থই
বলছেন। তাদের মধ্যে উত্বা ইবনে রাবীআহ্, আবু জাহল ইবনে হিশাম এবং আব্বাস ইবনে আবদিল মুত্তালিবও ছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)
মনে প্রাণে চাচ্ছিলেন যে, এরা যেন মুসলমান
হয়ে যায় এবং সত্য দ্বীন গ্রহণ করে। এমনি সময়ে ইবনে উম্মি মাকতূম (রাঃ) এসে
বললেনঃ “হে আল্লাহ্র রাসূল
(সঃ)! আমাকে কুরআনের কোন একটি আয়াত শুনিয়ে আল্লাহর কথা শিক্ষা দিন!” ইবনে উম্মি মাকতুম
(রাঃ)-এর কথা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর কাছে অসময়োচিত মনে হলো, তিনি মুখ ফিরিয়ে
কুরাইশ নেতৃবৃন্দের প্রতি মনোনিবেশ করলেন। তাদের সাথে কথা শেষ করে ঘরে ফেরার সময়
রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর মাথা ছিল নীচু, চোখের সামনে ছিল অন্ধকার। এই আয়াত ততক্ষণে নাযিল হয়ে গেছে। তারপর থেকে নবী
(সঃ) ইবনে উম্মি মাকতুম (রাঃ)-কে খুবই শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন এবং অত্যন্ত মনোযোগের
সাথে তাঁর কথা শুনতেন। আসা-যাওয়ার সময়ে জিজ্ঞেস করতেন যে, তার কোন প্রয়োজন
আছে কি-না, কোন কথা আছে কি-না
এবং কোন কিছু তিনি চান কি-না।১
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাঃ) বলেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “বিলাল (রাঃ) রাত থাকতেই আযান দেয়, সুতরাং তখন তোমরা পানাহার করবে, আব্দুল্লাহ্ ইবনে উম্মি মাকতুম (রাঃ) আযান না দেয়া পর্যন্ত খেতে থাকবে, তার আযান শোনা
মাত্র পানাহার বন্ধ করবে।”২ ইনি সেই দৃষ্টিহীন লোক যার সম্পর্কে সূরা عَبَسَ وَتَوَلَّىٰ - أَن جَاءَهُ الْأَعْمَىٰ অবতীর্ণ হয়েছে। ইনিও মুআযযিন ছিলেন। তাঁর দৃষ্টিশক্তি ছিল ত্রুটিপূর্ণ, পাশের লোকেরা যখন
বলতো যে, সুবহে সাদেক হয়ে
গেছে তখন তিনি আযান দিতেন।
সুপ্রসিদ্ধ মত এই যে, তার নাম আবদুল্লাহ্
(রাঃ)। কেউ কেউ বলেন যে, তাঁর নাম আমর
(রাঃ)। অবশ্য এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
كَلَّا إِنَّهَا تَذْكِرَةٌ অর্থাৎ 'না, এই আচরণ অনুচিত, এটা তো উপদেশ বাণী।
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয়তো এই সূরা অথবা ইলমে দ্বীন প্রচারের ব্যাপারে মানুষের মাঝে
ইতর-ভদ্র নির্বিশেষে সমতা রক্ষার উপদেশ, যে, তাবলীগে দ্বীনের
ক্ষেত্রে ছোট-বড়, ইতর-ভদ্র সবাই
সমান। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, تَذْكِرَةٌদ্বারা কুরআনকে বুঝানো হয়েছে।
যে ইচ্ছা করবে সে এটা স্মরণ রাখবে। অর্থাৎ আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং সকল
কাজ-কর্মে তার ফরমানকেই অগ্রাধিকার দিবে। ক্রিয়া সঙ্গীয় যমীর বা সর্বনাম দ্বারা
অহীর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই সূরা, এই নসীহত তথা সমগ্র কুরআন সম্মানিত ও নির্ভরযোগ্য সহীফায় সংরক্ষিত রয়েছে, যা অতি উচ্চ
মর্যাদা সম্পন্ন ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। যা অপবিত্রতা হতে মুক্ত এবং যা কমও করা হয় না
বা বেশীও করা হয় না।
سَفَرَةٍঅর্থ ফেরেশতাগণ, তাঁদের পবিত্র হাতে কুরআন রয়েছে। এটা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত যহ্হাক (রঃ)
এবং হযরত ইবনে যায়েদ (রঃ)-এর উক্তি। অহাব ইবনে মুনাব্বাহ্ (রঃ) বলেন যে, দ্বারা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর সাহাবীদেরকে বুঝানো হয়েছে। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, তারা হচ্ছেন
কুরআনের পাঠকগণ। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)
বলেন যে, এটা নবতী ভাষার
শব্দ, যার অর্থ হলো ‘কারিগণ'। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর মতে এর দ্বারা ঐ ফেরেশতাদেরকেই বুঝানো হয়েছে যারা
আল্লাহ্ এবং তার মাখলুকের মাঝে সাফীর বা দূত হিসেবে রয়েছেন। তিনি এটাকেই সঠিক
উক্তি বলেছেন।
যারা মানুষের মধ্যে সমঝোতা, আপোষ-মীমাংসা এবং কল্যাণের জন্যে চেষ্টা করেন তাদেরকে সাফীর বা দূত বলা হয়।
যেমন কবি বলেনঃ
وما ادع السفارة بين قومی * و ما امشي بغش آن
مشيت
অর্থাৎ “আমি আমার
সম্প্রদায়ের মাঝে দৌত্যকার্য পরিত্যাগ করি না এবং আমি চললে অচৈতন্য হয়ে চলি না।”
ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন যে, এখানে سَفَرَةٍ দ্বারা ফেরেশতাদেরকেই বুঝানো
হয়েছে যারা আল্লাহ্ তা'আলার নিকট হতে অহী
ইত্যাদি নিয়ে আসেন। তারা মানুষের মাঝে শান্তি রক্ষাকারী দূতদেরই মত। তাঁদের
চেহারা সুন্দর, পবিত্র ও উত্তম এবং
তাঁদের চরিত্র ও কাজকর্মও পূত-পবিত্র ও উত্তম। এখান হতে এটাও জানা যায় যে, কুরআন পাঠকদের
আমল-আখলাক অর্থাৎ কাজকর্ম ও চরিত্র ভাল হতে হবে।
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)
বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কুরআন
পাঠ করে ও তাতে ব্যুৎপত্তি লাভ করে সে মহান ও পূত-পবিত্র লিপিকর ফেরেশতাদের সাথে
থাকবে। আর যে ব্যক্তি কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কুরআন পাঠ করে তার জন্যে দ্বিগুণ পুণ্য
রয়েছে।”৩
--
১৭। মানুষ ধ্বংস হোক! সে
কত অকৃতজ্ঞ।
১৮। তিনি তাকে কোন বস্তু
হতে সৃষ্টি করেছেন?
১৯। শুক্র বিন্দু হতে
তিনি তাকে সৃষ্টি করেন, পরে তার পরিমিত বিকাশ সাধন করেন,
২০। অতঃপর তার জন্যে পথ সহজ করে দেন;
২১। তৎপর তার মৃত্যু ঘটান
এবং তাকে কবরস্থ করেন।
২২। এরপর যখন ইচ্ছা তিনি তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন।
২৩। না না, তিনি তাকে যে আদেশ
করেছেন, সে তা সমাধা করেনি।
২৪। মানুষ তার খাদ্যের
প্রতি লক্ষ্য করুক।
২৫। আমিই প্রচুর বারি
বর্ষণ করি,
২৬। অতঃপর আমি ভূমি প্রকৃষ্টরূপে বিদারিত করি;
২৭। এবং ওতে আমি উৎপন্ন
করি শস্য;
২৮। দ্রাক্ষা, শাক-সবজি,
২৯। যায়তুন, খর্জুর,
৩০। বহু বৃক্ষবিশিষ্ট
উদ্যান,
৩১। ফল এবং গবাদির খাদ্য,
৩২। এটা তোমাদের ও তোমাদের পশুগুলোর ভোগের জন্যে।
--
মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে যারা বিশ্বাস করে না এখানে তাদের নিন্দে করা হয়েছে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)فَلْيَنظُرِ
الْإِنسَانُ -এর অর্থ করেছেনঃ মানুষের উপর লা'নত বর্ষিত হোক। তারা কতই
না অকৃতজ্ঞ! আর এও অর্থ করা হয়েছে যে, সাধারণভাবে প্রায় সব মানুষই অবিশ্বাসকারী। তারা কোন দলীল-প্রমাণ ছাড়াই
শুধুমাত্র ধারণার বশবর্তী হয়ে একটি বিষয়কে অসম্ভব মনে করে থাকে। নিজেদের
বিদ্যা-বুদ্ধির স্বল্পতা সত্ত্বেও ঝট করে আল্লাহ্ তা'আলার বাণীকে অস্বীকার ও
অবিশ্বাস করে বসে। এ কথাও বলা হয়েছে
যে, এটাকে মিথ্যা
প্রতিপন্ন করতে তাকে কোন্ জিনিস উদ্বুদ্ধ করছে? তারপর মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন তুলে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ কেউ কি চিন্তা
করে দেখেছে যে, আল্লাহ্ তাকে কি
ঘৃণ্য জিনিস দ্বারা সৃষ্টি করেছেন? তিনি কি তাকে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন না? শুক্র বিন্দু বা
বীর্য দ্বারা তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তাদের তকদীর নির্ধারণ করেছেন অর্থাৎ বয়স, জীবিকা, আমল এবং সৎ ও অসৎ
হওয়া। তারপর তাদের জন্যে মায়ের পেট থেকে বের হওয়ার পথ সহজ করে দিয়েছেন। অর্থ
এও হতে পারেঃ আমি স্বীয় দ্বীনের পথ সহজ করে দিয়েছি অর্থাৎ সুস্পষ্ট করে দিয়েছি।
যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا
وَإِمَّا كَفُورًا
অর্থাৎ “আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।” (৭৬ ঃ ৩) হযরত হাসান
(রঃ) এবং হযরত ইবনে যায়েদ (রঃ) এ অর্থটিকেই সঠিকতর বলেছেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্
তা'আলাই সবচেয়ে ভাল
জানেন।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ “তৎপর তার মৃত্যু
ঘটান এবং তাকে কবরস্থ করেন। আরবদের বাক-বিনিময়ের মধ্যে এ কথা প্রচলিত আছে যে, যখন তারা কোন লোককে
দাফন বা কবরস্থ করে তখন বলে থাকেঃ قبرت الرجل অর্থাৎ “আমি লোকটিকে কবরস্থ করলাম।” আর এ কথাও বলেঃ اقبره الله অর্থাৎ “আল্লাহ্ তাকে
কবরস্থ করলেন।” এ ধরনের আরো কিছু
পরিভাষা তাদের মধ্যে প্রচলিত আছে। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা তাকে কবরের অধিবাসী
করেছেন। আবার যখন ইচ্ছা তিনি তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। এটাকেই بعث এবং نشور বলা হয়। যেমন অন্য জায়গায়
রয়েছেঃ
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ
ثُمَّ إِذَا أَنتُم بَشَرٌ تَنتَشِرُونَ
অর্থাৎ “তার নিদর্শনাবলীর
মধ্যে রয়েছে যে, তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে
মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।” (৩০ঃ ২০) আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
وَانظُرْ إِلَى الْعِظَامِ كَيْفَ نُنشِزُهَا
ثُمَّ نَكْسُوهَا لَحْمًا -
অর্থাৎ “আর অস্থিগুলোর
প্রতি লক্ষ্য কর, কিভাবে আমি সেগুলোকে
সংযোজিত করি এবং গোশত দ্বারা ঢেকে দিই।” (২ঃ ২৫৯) হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেন, “মেরুদণ্ডের হাড় ছাড়া মানব দেহের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মাটিতে খেয়ে ফেলে।” জিজ্ঞেস করা হলো। “হে আল্লাহর রাসূল
(সঃ)! ওটা কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ “ওটা একটা সরিষার
বীজের সমপরিমাণ জিনিস, ওটা থেকেই তোমাদেরকে
পুনরায় সৃষ্টি করা হবে।”৪
এরপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ অকৃতজ্ঞ
এবং নিয়ামত অস্বীকারকারী মানুষ বলে যে, তাদের জান-মালের মধ্যে আল্লাহ্র যেসব হক ছিল তা তারা আদায় করেছে। কিন্তু আসলে
তারা তা আদায় করেনি। মূলতঃ তারা আল্লাহ্র ফারায়েয আদায় করা হতে বিমুখ রয়েছে।
তাই তো আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ তিনি তাদেরকে যা আদেশ করেছেন তা তারা এখনো পুরো করেনি।
হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, কোন মানুষের পক্ষেই আল্লাহ্ তা'আলার ফারায়েয পুরোপুরি আদায় করা সম্ভব নয়। হযরত হাসান বসরী (রঃ) হতেও এ
ধরনের একটি উক্তি বর্ণিত রয়েছে। মুতাকাদ্দিমীনের মধ্যে আমি এটা ছাড়া অন্য কোন
উক্তি পাইনি। আমার মনে হয় আল্লাহ্ তা'আলার এই উক্তির ভাবার্থ এই যে, পুনরায় তিনি যখনই ইচ্ছা করবেন তখনই পুনরুজ্জীবিত করবেন, সেই সময় এখনো
আসেনি। অর্থাৎ এখনই তিনি তা করবেন না, বরং নির্ধারিত সময় শেষ হলে এবং বানী আদমের ভাগ্যলিখন সমাপ্ত হলেই তিনি তা
করবেন। তাদের ভাগ্যে এই পৃথিবীতে আগমন এবং এখানে ভালমন্দ কাজ করা ইত্যাদি আল্লাহর
ইচ্ছা অনুযায়ী পূর্ণতা প্রাপ্ত হওয়ার পর সমগ্র সৃষ্টিকে তিনি পুনরুজ্জীবিত
করবেন। প্রথমে তিনি যেভাবে সৃষ্টি করেছিলেন দ্বিতীয়বারও সেভাবেই সৃষ্টি করবেন।
মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত অহাব ইবনে মুনাব্বাহ্ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত উযায়ের (আঃ)
বলেনঃ “আমার নিকট একজন
ফেরেশতা এসে আমাকে বলেন যে, কবরসমূহ জমীনের পেট
এবং যমীন মাখলুকের মাতা। সমস্ত মাখলুক সৃষ্ট হবার পর কবরে পৌছে যাবে। কবরসমূহ
পূর্ণ হবার পর পৃথিবীর সিলসিলা বা ধারা পূর্ণতা লাভ করবে। ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু
রয়েছে সবই মৃত্যুবরণ করবে। জমীনের অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে জমীন সেগুলো উগলিয়ে
ফেলবে। কবরে যতো মৃতদেহ রয়েছে সবকেই বাইরে বের করে দেয়া হবে।” আমরা এই আয়াতের যে
তাফসীর করেছি তা এই উক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মহান ও পবিত্র আল্লাহই সকল
বিষয়ে সর্বজ্ঞানী।
এরপর আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত
হওয়ার প্রমাণ এর মধ্যেও নিহিত রয়েছে। হে মানুষ! শুষ্ক অনাবাদী জমি থেকে আমি যেমন সবুজ-সতেজ গাছের জন্ম দিয়েছি, সেই জমি থেকে ফসল
উৎপন্ন করে তোমাদের আহারের ব্যবস্থা করেছি, ঠিক তেমনি পঁচে গলে বিকৃত হয়ে যাওয়া হাড় থেকে আমি একদিন তোমাদের পুনরুত্থান ঘটাবো। তোমরা দেখতে পাচ্ছ যে, আমি আকাশ থেকে ক্রমাগত
বারি বর্ষণ করে ঐ পানি জমিতে পৌঁছিয়ে দিয়েছি। তারপর ঐ পানির স্পর্শ পেয়ে বীজ
থেকে শস্য উৎপন্ন হয়েছে। কত রকমারী শস্য, কোথাও আঙ্গুর, কোথাও আবার তরি-তরকারী উৎপন্ন হয়েছে।
حب সর্বপ্রকারের দানা বা বীজকে বলা হয় عنب-এর অর্থ হলো আঙ্গুর।
قضبবলা হয় সেই সবুজ চারাকে যেগুলো পশুরা খায়। আল্লাহ্ তা'আলা যায়তুন পয়দা করেছেন
যা তরকারী হিসেবে রুটির সাথে খাওয়া হয়। তাছাড়া ওকে জ্বালানী রূপে ব্যবহার করা
যায় এবং তা হতে তেলও পাওয়া যায়। তিনি সৃষ্টি করেছেন খেজুর বৃক্ষ। সেই বৃক্ষের
কাঁচা-পাকা, শুকনো এবং ভিজে
খেজুর তোমরা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকো। সেই খেজুর দিয়ে তোমরা শিরা এবং
সিরকাও তৈরী করে থাকো। তাছাড়া আল্লাহ্ বাগান সৃষ্টি করেছেন।
غلبا খেজুরের বড় বড় ফলবান বৃক্ষকেও বলা হয়। وَحَدَائِقَ غُلْبًا এমন বাগানকে বলা হয় যা খুবই ঘন এবং ফলে ফলে সুশোভিত। মোটা
গ্রীবাবিশিষ্ট লোককেও আরববাসীরা اغلب বলে থাকে। আর আল্লাহ্ তা'আলা মেওয়া সৃষ্টি করেছেন। اب বলা হয় ঘাস পাতা ইত্যাদিকে যা
পশুরা খায়, কিন্তু মানুষ খায়
না। মানুষের জন্যে যেমন ফল, মেওয়া তেমনি পশুর
জন্যে ঘাস।
হযরত আতা (রঃ) বলেন যে, জমিতে যা কিছু
উৎপন্ন হয় তাকে اب বলা হয়। যহ্হাক (রঃ) বলেন যে, মেওয়া ছাড়া বাকী
সবকিছুকে اب বলা হয়। আবুস সায়েব (রঃ) বলেন যে, ابমানুষ এবং পশু উভয়ের খাদ্য বা
আহার্য হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-কে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “কোন আকাশ আমাকে তার
নীচে ছায়া দিবে? কোন্ জমীন আমাকে
তার পিঠে তুলবে? যদি আমি আল্লাহর
কিতাবের যে বিষয় ভাল জানি না তা জানি বলে উক্তি করি?” অর্থাৎ এ সম্পর্কে
আমার জানা নেই। ইবরাহীম নাখঈ (রঃ) হযরত সিদ্দীকে আকবর (রাঃ)-কে পাননি।
সহীহ্ সনদে
তাফসীরে ইবনে জারীরে হযরত উমার ফারুক (রাঃ) থেকে বর্ণিত এ রিওয়ায়েত আছে যে, তিনি মিম্বরের উপর
সূরা عَبَسَ পাঠ করতে শুরু করেন এবং বলেনঃ فَاكِهَةً -এর অর্থ তো আমরা মোটামুটি জানি, কিন্তু أَبًّا -এর অর্থ কি? তারপর তিনি নিজেই
বলেনঃ “হে উমার (রাঃ)! এ
কষ্ট ছাড়ো!” এতে স্পষ্টভাবে
বুঝা যায় যে, أَبًّاযমীন থেকে উৎপাদিত জিনিসকে বলা হয়, কিন্তু তার
আকার-আকৃতি জানা যায় ।... فَأَنبَتْنَا فِيهَا দ্বারা এর চেয়ে স্পষ্ট কিছু
জানা যায় না।
এরপর আল্লাহ্ পাক বলেনঃ এটা তোমাদের ও তোমাদের পশুগুলোর ভোগের জন্যে। কিয়ামত
পর্যন্ত এই সিলসিলা বা ক্রমধারা অক্ষুন্ন থাকবে এবং তোমরা। তা থেকে লাভবান হতে
থাকবে।
--
৩৩। যখন ঐ ধ্বংস ধ্বনি
এসে পড়বে;
৩৪। সেই দিন মানুষ পলায়ন
করবে তার ভ্রাতা হতে
৩৫। এবং তার মাতা, তার পিতা,
৩৬। তার পত্নী ও তার
সন্তান হতে,
৩৭। সেই দিন তাদের
প্রত্যেকের হবে এমন গুরুতর অবস্থা যা
তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে।
৩৮। সে দিন বহু আনন
দীপ্তিমান হবে;
৩৯। সহাস্য ও প্রফুল্ল
৪০। এবং অনেক মুখমণ্ডল
হবে সেদিন ধুলি-ধূসর
৪১। সেগুলোকে আচ্ছন্ন
করবে কালিমা।
৪২। তারাই কাফির ও
পাপাচারী।
--
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, صَّاخَّةُ কিয়ামতের একটি নাম। এ নামের কারণ এই যে, কিয়ামতের শিংগার
আওয়াজ ও শোরগোলে কানের পর্দা ফেটে যাবে। সেদিন মানুষ তার নিকটাত্মীয়দেরকে দেখবে কিন্তু
তাদেরকে দেখে পালিয়ে যাবে। কেউ কারো কোন কাজে আসবে না। স্বামী তার স্ত্রীকে দেখে
বলবেঃ আমি পৃথিবীতে তোমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছিলাম? স্ত্রী উত্তরে বলবেঃ নিঃসন্দেহে আপনি আমার সাথে খুবই ভাল ব্যবহার করেছিলেন। আমাকে খুবই
ভালবাসতেন। এ কথা শুনে স্বামী বলবেঃ আজ আমার একটি মাত্র পুণ্যের প্রয়োজন, তাহলেই আমি আজকের
এই মহা বিপদ থেকে মুক্তি পেতে পারি। ঐ একটি পুণ্য তুমি আমাকে দাও। স্ত্রী বলবেঃ আপনি তো সামান্য জিনিসই চেয়েছেন, কিন্তু আমি যে
অক্ষম! আজ পুণ্যের আমার নিজেরই একান্ত প্রয়োজন। আশংকা করছি আমিও বিপদে পড়ি না কি? কাজেই পুণ্য দেয়া
সম্ভব নয়। পুত্র পিতার সাথে দেখা করে একই রকম আবেদন-নিবেদন জানাবে এবং একই রকম
জবাব পাবে।
সহীহ হাদীসে শাফাআত প্রসঙ্গে বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ বড়
বড় পয়গাম্বরদের কাছে জনগণ শাফাআতের জন্যে আবেদন জানাবে, কিন্তু তাঁদের
প্রত্যেকেই বলবেনঃ “ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী!' এমনকি হযরত ঈসা
রুহুল্লাহ্ (আঃ) পর্যন্ত বলবেনঃ আজ আল্লাহ্ তা'আলার কাছে নিজের প্রাণ ছাড়া অন্য কারো জন্যে আমি কিছুই বলবো না। এমনকি যার
গর্ভ থেকে আমি ভূমিষ্ট হয়েছি সেই মা জননী হযরত মরিয়ম (আঃ)-এর জন্যেও কিছু বলবো
না। মোটকথা, বন্ধু বন্ধুর কাছ
থেকে, আত্মীয় আত্মীয়ের
কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যাবে। প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ও বিব্রত থাকবে।
অন্যের প্রতি কেউ ভ্রুক্ষেপ করবে না। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেনঃ “তোমরা নগ্নপদে, নগ্নদেহে খৎনাবিহীন অবস্থায় আল্লাহ্র কাছে জমায়েত হবে।” এ কথা শুনে তার এক স্ত্রী বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাহলে তো অন্যের লজ্জাস্থানের প্রতি চোখ পড়বে!” রাসূলুল্লাহ বললেন!
ঐ মহা প্রলয়ের দিনে সব মানুষ এতো ব্যস্ত থাকবে যে, অন্যের প্রতি তাকানোর সুযোগ কারো থাকবে না।”৫
কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, অতঃপর আল্লাহর নবী (সঃ) .... لِكُلِّ امْرِئٍ -এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন।
অন্য এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ঐ স্ত্রী ছিলেন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ)। হযরত আয়েশা
(রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি নিবেদিত হোক! আমি আপনাকে
একটি কথা জিজ্ঞেস করছি, আপনি তার উত্তর
দিন।” রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)
বললেনঃ “জানা থাকলে অবশ্যই
উত্তর দিব।” হযরত আয়েশা (রাঃ)
তখন জিজ্ঞেস করলেনঃ “মানুষের হাশর
কিভাবে হবে?” রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) উত্তর দিলেনঃ “নগ্নপায়ে ও নগ্নদেহে।” কিছুক্ষণ পর হযরত
আয়েশা জিজ্ঞেস করলেনঃ “মহিলারাও কি ঐ
অবস্থায় থাকবে?” রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “হ্যা।” এ কথা শুনে উম্মুল
মুমিনীন দুঃখ করতে লাগলেন। তখন আল্লাহর নবী (সঃ) বললেনঃ “হে আয়েশা (রাঃ)!
এই আয়াতটি শোন, তারপর পোশাক পরিধান
করা না করা নিয়ে তোমার কোন আফসোস বা দুঃখ থাকবে না।” হযরত আয়েশা (রাঃ)
জিজ্ঞেস করলেনঃ “কোন্ আয়াত?” জবাবে রাসূলুল্লাহ্
(সাঃ) ..... لِكُلِّ امْرِئٍ -এ আয়াতটি পাঠ করলেন।
অন্য এক বর্ণনায় উম্মুল মুমিনীন হযরত সাওদা (রাঃ) -এর জিজ্ঞেস করার কথা
উল্লিখিত হয়েছে। সব মানুষ নগ্নপায়ে, নগ্নদেহে খত্নাবিহীন অবস্থায় হাশরের মাঠে সমবেত হবে। কেউ কান পর্যন্ত ঘামের
মধ্যে ডুবে যাবে, কারো মুখ পর্যন্ত
ঘাম পৌছবে তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এই আয়াত তিলাওয়াত করেন।
এরপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ সেখানে লোকদের
দুটি দল হবে। এক দলের চেহারা আনন্দে চমকাতে থাকবে। তাদের মন নিশ্চিন্ত ও পরিতৃপ্ত
থাকবে। তাদের মুখমণ্ডল সুদর্শন এবং উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। তারা হবে জান্নাতি দল। আর
একটি দল হবে জাহান্নামীদের। তাদের চেহারা মসিলিপ্ত, কালিমাময় ও মলিন থাকবে।
হাদীস শরীফে আছে যে, তাদের ঘাম হবে
তাদের জন্যে লাগামের মত। তারা ধূলি-মলিন অবস্থায় পড়ে থাকবে। এরা সেই দল যাদের
মনে কুফরী ছিল এবং আমল ছিল পাপে পরিপূর্ণ। যেমন অন্য এক জায়গায় আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
وَلَا يَلِدُوا إِلَّا فَاجِرًا كَفَّارًا অর্থাৎ “তারা জন্ম দিতে
থাকবে শুধু দুষ্কৃতিকারী কাফির।” (৭১ : ২৭)।
--
( সূরাঃ আবাসা এর তাফসীর সমাপ্ত )
--
❏ টীকাঃ
১. এখানে উল্লেখ্য যে, হাদীসের সংজ্ঞায়
এই বর্ণনাটি গারীব এবং এর সনদ সম্পর্কেও কথা আছে।
২. এ হাদীসটি ইমাম ইবনে
আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
৩. এ হাদীসটি মুসনাদে
আহমাদে বর্ণিত হয়েছে।
৪. এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও এটা ভাষার কিছু পার্থক্যসহ বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে প্রশ্ন ও উত্তরকে ছেড়ে
দেয়া হয়েছে।
৫. এ হাদীসটি ইমাম ইবনে
আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
No comments:
Post a Comment