সূরাঃ বালাদ/৯০, মাক্কী । (আয়াতঃ ২০, রুকূঃ ১)




করুণাময়, কৃপানিধান আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১। শপথ করছি এই নগরের,
 ২। আর তুমি এই নগরের বৈধ অধিকারী হবে।
৩। শপথ জন্মদাতার ও যা সে জন্ম দিয়েছে তার।
৪। অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি ক্লেশের মধ্যে।
৫। সে কি মনে করে যে, কখনো তার উপর কেউ ক্ষমতাবান হবে না?
৬। সে বলেঃ আমি রাশি রাশি অর্থ উড়িয়ে দিয়েছি।
৭। সে কি ধারণা করে যে, তাকে  কেউই দেখছে না?
৮। আমি কি তার জন্যে সৃষ্টি করিনি চক্ষুযুগল?
৯। আর জিহ্বা ও ওষ্ঠদ্বয়?
১০। এবং আমি কি তাকে দুটি পথই দেখাইনি?
--
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ এখানে জনবসতিপূর্ণ শান্তির সময়ের মক্কা মুআমার শপথ করছেন। তিনি শপথ করে বলেছেনঃ হে নবী (সঃ) এখানে একবার তোমার জন্যে যুদ্ধ বৈধ হবে, তাতে কোন পাপ বা অন্যায় হবে না। আর ঐ যুদ্ধে যা কিছু পাওয়া যাবে সেগুলো তোমার জন্যে শুধু ঐ সময়ের জন্যে বৈধ হবে।

সহীহ্ হাদীসে এসেছে যে, আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, এই বরকত পূর্ণ শহর মক্কাকে আল্লাহ্ তাআলা প্রথম দিন থেকেই সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন। এই সম্মান ও মর্যাদা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। কতকগুলো কাজ এখানে হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন তথাকার কোন গাছ কাটা যাবে না, কোন কাঁটা উপড়িয়ে ফেলা যাবে না। আমার জন্যে শুধুমাত্র একটি দিনের এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে বৈধ করা হয়েছিল, আজ আবার আমার জন্যেও নিষিদ্ধ সম্পর্কিত আদেশ পূর্বের মতই বলবৎ থাকবে। প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তির দায়িত্ব হলো অনুপস্থিত লোকদের নিকট খবর পৌছিয়ে দেয়া।

একটি হাদীসে আছে যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃএখানে (মক্কায়) যুদ্ধ-বিগ্রহের বৈধতা সম্বন্ধে কেউ আমার যুদ্ধকে যুক্তি হিসেবে পেশ করলে তাকে বলে দিতে হবেঃ আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর রাসূল (সঃ)-এর জন্য অনুমতি দিয়েছেন, তোমাদের জন্যে দেননি।
এরপর আল্লাহ্ তাআ'লা পিতা এবং সন্তানের শপথ করেছেন। কারো কারো মতে (مَا وَلَدَ)  শব্দের (مَا)শব্দটি আরবী ব্যাকরণের পরিভাষায় (مانافية) বা নেতিবাচক  (مَا) অর্থাৎ যার সন্তান আছে তার এবং যে নিঃসন্তান তার শপথ। আর যদি ব্যাকরণের পরিভাষায় একে (مَا) কে (موصوله) মনে করা হয় তাহলে অর্থ হবেঃ পিতার এবং সন্তানদের শপথ। পিতা দ্বারা হযরত আদম (আঃ)-কে এবং সন্তান দ্বারা সমগ্র মানব জাতিকে বুঝানো হয়েছে। এই উক্তিটিই উত্তম বলে অনুভূত হচ্ছে কেননা, এর পূর্বে মক্কাভূমির শপথ করা হয়েছে যা সমস্ত জমীন ও বস্তিসমূহের জননী। অতঃপর মক্কার অধিবাসীদের শপথ করা হয়েছে অর্থাৎ মানুষের মূল বা শিকড় হযরত আদম (আঃ) এবং তাঁর সন্তানদের শপথ করা হয়েছে। আবু ইমরান (রঃ) বলেন যে, এখানে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁর সন্তানদের কথা বলা হয়েছে। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেন যে, এখানে সাধারণভাবে সকল পিতা এবং সকল সন্তানের কথা বলা হয়েছে।

অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি মানুষকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর, সুষম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অধিকারী করে সৃষ্টি করেছি। মায়ের পেটেই তাকে এই পবিত্র গঠন-বিন্যাস এবং উন্নত আকৃতি প্রদান করা হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ্ তাআ'লা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الْإِنسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ
الَّذِي خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ
فِي أَيِّ صُورَةٍ مَّا شَاء رَكَّبَكَ
হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহান প্রতিপালক সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করলো যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন এবং সুসমঞ্জস করেছেন। যেই আকৃতিতে চেয়েছেন তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” (৮২ঃ৬-৮) আর এক জায়গায় বলেনঃ
لقد خلقنا الإنسان في أحسن تقويم -
অর্থাৎআমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।” (৯৫ঃ ৪) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ আমি তাকে শক্তি-সামর্থ সম্পন্ন করে সৃষ্টি করেছি। মানুষের উচিত তার নিজের প্রতি লক্ষ্য করা,তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা, তার দাঁত বের হওয়া ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য করা। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, মানুষ প্রথমে ছিল বীর্য বা শুক্র, তারপরে হয়েছে রক্তপিন্ড এবং এরপরে হয়েছে গোশতটুকরা। মোটকথা, মানুষের জন্ম খুবই বিস্ময়কর এবং কষ্টকরও বটে, যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
حملته امه كرها ووضعته کرها .
অর্থাৎতার মাতা তাকে কষ্ট করে গর্ভে বহন করেছে এবং কষ্ট করে প্রসব করেছে।” (৪৬ : ১৫) 

মা সন্তানকে দুধ পান করানোতে এবং লালন-পালন করাতেও কঠিন কষ্ট স্বীকার করেছে। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, ভাবার্থ হচ্ছেঃ কঠিন অবস্থায় সৃষ্টি করেছেনইকরামা (রঃ) বলেন যে, ভাবার্থ হলো ঃ কঠিন অবস্থায় এবং দীর্ঘ সময়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। দাঁড়ানো অবস্থার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে এমনিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে কষ্ট সহ্য করতে হয়। হযরত আদম (আঃ) যেহেতু আসমানে সৃষ্ট হয়েছিলেন এ কারণেই এটা বলা হয়েছে।

মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেন তারা কি মনে করে যে, তাদের উপর কেউ ক্ষমতাবান হবে না? অর্থাৎ তারা ধারণা করে যে, তাদের ধন-মাল নিতে কেউ সক্ষম নয়? তারা কি মনে করে যে, তাদের উপর কারো কর্তৃত্ব নেই? তারা কি জিজ্ঞাসিত হবে না যে, তারা কোথা থেকে ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে? নিঃসন্দেহে তাদের উপর আল্লাহর কর্তৃত্ব রয়েছে এবং আল্লাহ তাদের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। তারা বলে বেড়ায়ঃ আমরা বহু ধনমাল খরচ করে ফেলেছি। তারা কি মনে করে যে, তাদেরকে কেউ দেখছে না? অর্থাৎ তারা কি নিজেদেরকে আল্লাহর দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য মনে করে?
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি কি মানুষকে দেখার জন্যে দুটি চক্ষু প্রদান করিনি? মনের কথা প্রকাশ করার জন্যে কি আমি তাদেরকে জিহ্বা দিইনি? কথা বলার জন্যে, পানাহারের জন্যে, চেহারা ও মুখমণ্ডলের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যে কি আমি তাদেরকে দুটি ওষ্ঠ প্রদান করিনি?

নবী করীম (সঃ) বলেছেন যে, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃহে আদম সন্তান! আমি তোমাদেরকে অসংখ্য বড় বড় নিয়ামত দান করেছি যেগুলো তোমরা গণনা করে শেষ করতে পারবে না। ওগুলোর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তিও তোমাদের নেই। আমি তোমাদেরকে দেখার জন্যে দুটি চক্ষু দান করেছি। তারপর সেই চোখের উপর গিলাফ সৃষ্টি করেছি। কাজেই হালাল জিনিসের প্রতি সেই চোখ দ্বারা তাকাও এবং হারাম বা নিষিদ্ধ জিনিস সামনে এলে চক্ষু বন্ধ করে ফেলোআমি তোমাদেরকে জিহ্বা দিয়েছি এবং ওর গিলাফও দিয়েছি। সুতরাং আমার সন্তুষ্টিমূলক কথা মুখ থেকে বের কর এবং অসন্তুষ্টিমূলক কথা থেকে জিহ্বাকে বিরত রাখোআমি তোমাদেরকে লজ্জাস্থান দিয়েছি এবং ওর মধ্যে পর্দা দিয়েছি। কাজেই বৈধ ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করো, কিন্তু অবৈধ ক্ষেত্রে পর্দা স্থাপন করোহে আদম সন্তান! আমার অসন্তুষ্টি সহ্য করার মত শক্তি তোমাদের নেই। আমার শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতাও তোমাদের নেই।

এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা বলেনঃ আমি তাদেরকে ভালো মন্দ দুটি পথই দেখিয়েছি। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “(ভালো ও মন্দ) এ দুটি পথ, মন্দ পথকে তোমাদের নিকট তিনি ভালো পথ হতে পছন্দনীয় ও প্রিয় করেননি। কিন্তু এ হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল। তবে মুরসালরূপেও এ হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, দুই নাজদ দ্বারা দুই স্তনকে বুঝানো হয়েছে। আরও কতিপয় তাফসীরকার এ কথাই বলেছেন। ইমাম ইবনে জারীর (রাঃ) বলেন যে, প্রথম উক্তিটিই সঠিক। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا
إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا
অর্থাৎআমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্র বিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করবার জন্যে, এ জন্যে আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন । আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।” (৭৬ঃ ২-৩)

--
১১। কিন্তু সে গিরি সংকটে প্রবেশ করলো না।
১২। তুমি কি জান যে, গিরিসংকট কি?
১৩। এটা হচ্ছেঃ দাসকে মুক্তি প্রদান;
১৪। অথবা, দুর্ভিক্ষের দিনে আহার্য দান;
১৫। পিতৃহীন, আত্মীয়কে,
১৬। অথবা ধুলায় লুষ্ঠিত দরিদ্রকে,
১৭। তদুপরি অন্তর্ভুক্ত হওয়া  মুমিনদেরকে এবং তাদের যারা পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের ও দয়া দাক্ষিণ্যের;
১৮। তারাই সৌভাগ্যশালী।
১৯। এবং যারা আমার নিদর্শন , প্রত্যাখ্যান করেছে, তারাই হতভাগ্য।
২০। তাদের উপরই অবরুদ্ধ নরকাগ্নি রয়েছে।
--

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বলেন যে, আকাবা হলো জাহান্নামের একটি পাহাড়ের নাম। হযরত কাব আহবার (রাঃ) বলেন যে, ওটা হলো জাহান্নামের সত্তরটি সোপান। কাতাদা (রঃ) বলেনঃ এটা প্রবেশ করার শক্ত ঘাঁটি, আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যের মাধ্যমে তাতে প্রবেশ কর। এরপর ঘোষিত হচ্ছেঃ তোমার কি জানা আছে, এ ঘাঁটি কি? অতঃপর বলেনঃ গোলাম আযাদ করা এবং আল্লাহর নামে অন্নদান করা।

ইবনে যায়েদ বলেনঃ অর্থাৎ ওরা মুক্তি ও কল্যাণের পথে চলেনি কেন? তারপর মানুষকে সর্তক করতে গিয়ে বলা হচ্ছেঃ তোমরা কি জান আকাবাকি? কোন গর্দানকে মুক্ত করা বা দুর্ভিক্ষের দিনে খাদ্য দান করা । আয়াতাংশ (فَكُّ رَقَبَةٍ) অথবা (فك رقبة) দুভাবে পড়াই বিশুদ্ধ। অর্থাৎ (اضافت) এর সাথেও পড়া হয়েছে, আবার (فك) কে (فعل) এবং (هو) সর্বনামকে  (فعل) এবং (رقبة) কে (مفعول) করেও পড়া হয়েছে। এই দুটো কিরআতই বিশুদ্ধ।
মুসনাদে আহমদে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, . রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃযে ব্যক্তি কোন মু'মিন গর্দান কে অর্থাৎ কোন মু'মিন গোলামকে মুক্ত করে, আল্লাহ তা'আলা ঐ গোলামের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে তার প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে জাহান্নামের অগ্নি হতে মুক্তি দান করে থাকেন। এমন কি, হাতের বিনিময়ে হাত, পায়ের বিনিময়ে পা এবং লজ্জাস্থানের বিনিময়ে লজ্জাস্থান।

হযরত আলী ইবনে হুসাইন (রাঃ) এ হাদীসটি শোনার পর এ হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত সাঈদ ইবনে মারজানা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃআপনি কি স্বয়ং হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর মুখে এ হাদীসটি শুনেছেন?” তিনি উত্তরে বলেনঃহ্যাঁতখন হযরত আলী ইবনে হুসাইন (রাঃ) তার গোলাম মাতরাফকে ডেকে বলেনঃযাও, তুমি আল্লাহর নামে মুক্ত।

হযরত আবু নাজীহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃযে মুসলমান কোন মুসলমান (দাস) কে মুক্ত করে, আল্লাহ্ তা'আলা তার এক একটি হাড়ের বিনিময়ে ঐ মুক্তকারীর এক একটি হাড়কে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করেন। আর যে মুসলমান নারী কোন মুসলমান নারী (দাসী) কে আযাদ করে, আল্লাহ্ তা'আলা তার এক একটি হাড়কে ঐ মুক্তি প্রাপ্তা দাসীর এক একটি হাড়ের বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করেন।

মুসনাদে আহমদে হযরত আমর ইবনে আবাসাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃযে ব্যক্তি আল্লাহর যিকরের উদ্দেশ্যে মসজিদ বানিয়ে দেয়, আল্লাহ্ তার জন্যে জান্নাতে ঘর বানিয়ে দেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমান দাসকে মুক্ত করে, আল্লাহ্ ওটাকে ঐ মুক্তকারীর ফিদইয়া (মুক্তিপণ) হিসেবে গণ্য করেন এবং তাকে জাহান্নামের অগ্নি হতে মুক্তি দান করে থাকেন। যে ব্যক্তি ইসলামে বার্ধক্যে উপনীত হয় তাকে কিয়ামতের দিন নূর দেয়া হবে।

অন্য এক রিওয়াইয়াতে রয়েছেঃযে ব্যক্তি আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করবে, ঐ তীর (লক্ষ্য স্থলে) লাগুক বা নাই লাগুক, সে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধরের মধ্য হতে একটি দাস মুক্ত করার সওয়াব লাভ করবে।

আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃযে মুসলমানের তিনটি সন্তান বালেগ হওয়ার পূর্বেই মারা যায়, আল্লাহ্ তাকে স্বীয় রহমতের গুণে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে দুই জোড়া দান করবে, আল্লাহ্ তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দিবেন, যে দরজা দিয়ে সে খুশি প্রবেশ করবে।

সুনানে আবী দাউদে হযরত আরীফ ইবনে আইয়াশে দাইলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা আমরা হযরত ওয়ায়েলাইবনে আশকার (রাঃ) কাছে গিয়ে বললামঃ আমাদেরকে এমন একটি হাদীস শুনিয়ে দিন যাতে বেশি কম কিছু না থাকে। এ কথা শুনে তিনি রাগান্বিত হলেন এবং বললেনঃতোমাদের মধ্যে কেউ যদি তার ঘরে রক্ষিত কুরআন মাজীদ পাঠ করে তবে সে কি তাতে কম-বেশী করে? আমরা বললামঃ জনাব! আমরা এরূপ বলতে চাইনি, বরং আমাদের উদ্দেশ্য এই যে, আপনি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হতে যে হাদীস শুনেছেন তা আমাদেরকে শুনান। তিনি তখন বললেনঃ একবার আমি আমার এক সঙ্গীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর দরবারে আগমন করি। আমার ঐ সঙ্গী হত্যার মাধ্যমে নিজের উপর জাহান্নাম ওয়াজীব করে নিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বললেনঃতার পক্ষ থেকে দাস মুক্ত করে দাও। আল্লাহ্ তা'আলা ঐ দাসের এক একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে মুক্তকারীর একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবেন।

অন্য একটি হাদীসে আছে যে, যে ব্যক্তি কারো গর্দান মুক্ত করবে, আল্লাহ তা'আলা ঐ কাজকে তার জন্যে ফিদিয়ারূপে গণ্য করবেন। এ ধরনের আরও বহু হাদীস রয়েছে।
মুসনাদে আহমদে হযরত বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন বেদুইন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর নিকট এসে বলেঃহে আল্লাহ্র রাসূল (সঃ)! আমাকে এমন আমল শিখিয়ে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবে।রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তখন তাকে বললেনঃঅল্প কথায় তুমি খুব বড় প্রশ্ন করে বসেছোদাস মুক্ত কর, গর্দান মুক্ত কর।বেদুইন বললোঃহে আল্লাহ্র রাসূল (সঃ)! এ দুটি কি একাৰ্থবোধক নয়?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বললেনঃনা । দাস মুক্ত করার অর্থ হলো এই যে, তুমি একাকী একটি দাস মুক্ত করে দিবে। আর (فَكُّ رَقَبَةٍ) এর অর্থ হলোঃ দাসমুক্ত করার ব্যাপারে কম বেশী সাহায্য করা, দুধেল পশু দুধ পানের জন্যে কোন মিসকীনকে দেয়া, অত্যাচারী আত্মীয়ের সাথে সদ্ব্যবহার করা, এসবই হলো জান্নাতে প্রবিষ্ট করার মত কাজ। যদি তুমি এসব করতে সক্ষম না হও তবে ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, পিপাসার্তকে পানি দাও, ন্যায়ের আদেশ কর এবং অন্যায় হতে বিরত রাখোযদি তুমি এতেও সক্ষম না হও তবে পুণ্য ও ন্যায়ের কথা ছাড়া অন্য কোন কথা মুখ হতে বের করো না।

(ذِي مَسْغَبَةٍ)  এর অর্থ হলো ক্ষুধাতুর। অর্থাৎ ক্ষুধার সময়ে খাদ্য খাওয়ানোএটাও আবার ঐ শিশুকে যে ইয়াতীম বা পিতৃহীন হয়েছে। আর তার সাথে তার আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে। যেমন মুসনাদে আহমদে হযরত সালমান ইবনে আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃমিসকীনকে সাদকা দেয়া হলো শুধু সাদকা আর আত্মীয় স্বজনকে সাদকা করলে একই সাথে দুটি কাজের সওয়াব পাওয়া যায়। একটি হলো সাদকার সওয়াব এবং আর একটি হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক মিলিত রাখার সওয়াব।

অথবা এমন মিসকিনকে আহার্যদান করা যে ধূলালুণ্ঠিত, পথের উপর পড়ে আছে, বাড়িঘর নেই, বিছানাপত্র নেই। ক্ষুধার জ্বালায় পেট মাটির সাথে লেগে আছে। যে নিজের গৃহ হতে দূরে রয়েছে। যে মুসাফির, ফকীর, মিসকীন, পরমুখাপেক্ষী, ঋণী, কপর্দকহীন, খবরাখবর নেয়ার মত যার কেউ নেই। যার পরিবার-সদস্য অনেক অথচ সম্পদ কিছুই নেই। এসবই প্রায় একই অর্থবোধক।

তদুপরি এই ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সেইসব কাজের জন্যে আল্লাহর কাছে বিনিময় প্রত্যাশা করে। সেই পুরস্কৃত হবে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (ومن اراد الاخرة ......) , অর্থাৎ, “যে ব্যক্তি আখেরাতের ইচ্ছা রাখে এবং সে জন্য চেষ্টা করে, আর আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসী হয়, তার প্রচেষ্টাসমূহ আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত হবে। যেমন আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزَى إِلَّا مِثْلَهَا وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُوْلَئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُونَ فِيهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
অর্থাৎ, “বিশ্বাসীদের মধ্যে যে নারী-পুরুষ পুণ্য কাজ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সেখানে জান্নাতের রিক লাভ করবে।” (৪০ঃ ৪০)

তারপর তাদের আরো বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ তারা লোকদের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার এবং তাদের প্রতি পরস্পর সহানুভূতি এবং অনুগ্রহ করার জন্যে একে অপরকে নসীহত করে। যেমন হাদীস শরীফে রয়েছেঃতোমরা পৃথিবীবাসীদের প্রতি অনুগ্রহ কর, যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন।অন্য এক হাদীসে রয়েছেঃযে ব্যক্তি অনুগ্রহ করে না তার প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করা হয় না।

সুনানে আবি দাউদে রয়েছেঃযে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের প্রতি অনুগ্রহ করে না এবং আমাদের বড়দের অধিকার উপলব্ধি করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ এ সব লোক তারাই যাদের ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে। আর আমার আয়াতকে যারা মিথ্যা বলে অবিশ্বাস করেছে তাদের বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে। তারা অগ্নি পরিবেষ্টিত হবে। ঐ অগ্নি হতে কোন দিন মুক্তিও পাওয়া যাবে না এবং অব্যাহতিও মিলবে না। ঐ আগুনের দরজা তাদের উপর অবরুদ্ধ থাকবে। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত বর্ণনা সূরা (وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ) এর মধ্যে আসবে ইনশাআল্লাহ।

হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ তার মধ্যে কোন জানালা থাকবে না, ছিদ্র থাকবে না। সেই জায়গা হতে কখনো বের হওয়া সম্ভব হবে না।

হযরত আবু ইমরান আলী জুদী (রাঃ) বলেন যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক বিদ্রোহীকে, প্রত্যেক শয়তানকে এবং ঐ ব্যক্তিকে, যাদের অত্যাচারে পৃথিবীতে মানুষ ভীত ও অতিষ্ঠ থাকতো, তাদের প্রত্যেককে লোহার শিকলে শক্ত করে বেঁধে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিবেন। তারপর জাহান্নামকে অবরুদ্ধ করে দেয়া হবে। আল্লাহর কসম! তারা তা থেকে কখনো স্থানান্তরিত হবে না। আল্লাহর কসম! তারা কখনো আকাশ দেখতে পাবে নাআল্লাহর কসম! কিছুটা আরামে কখনো তাদের দু'চোখের পাতা বন্ধ হবে না। (অর্থাৎ ক্ষণিকের জন্যেও তারা এমন শান্তি লাভ করবে না যার ফলে তাদের নিদ্রা আসতে পারে।) আল্লাহর শপথ! তারা কখনো সুস্বাদু খাবার খেতে পাবে না।
--
(সুরাঃ বালাদ এর তাফসীর সমাপ্ত)
--
টীকাঃ
১. এ হাদীসটি হাফিয ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
. এ হাদীসটি সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, জামে তিরমিযী এবং সুনানে নাসায়ীতেও বর্ণিত আছে। সহীহ মুসলিমে এ কথাও রয়েছে যে ঐ গোলামটিকে দশ হাজার দিরহামে ক্রয় করা হয়েছিল।
. এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
. এ হাদীসগুলো মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর সনদ খুবই উত্তম।
. এ হাদীসটি সুনানে নাসায়ীতেও বর্ণিত হয়েছে।

2 comments:

  1. Blackjack - Casino Slot - Review by CasinoBonusOnline
    Blackjack is an interesting 프리 벳 game to play at 피망 슬롯 a casino with a decent Blackjack is a type of 인생도박 video game 에밀리 벳 리 카즈 that you will find in 토토 사이트 검증 the casino when you play.

    ReplyDelete
  2. NJ gambling: Casinos that allow players to gamble at
    What are legal NJ gambling? 충주 출장샵 — The following 파주 출장마사지 is a list of all NJ casinos that have opened or 속초 출장안마 closed their doors. 김해 출장마사지 Most have opened or closed 김포 출장마사지 their

    ReplyDelete