(দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি)।
১। দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের
নিন্দে করে;
২। যে অর্থ জমায় ও তা গণে গণে রাখে;
৩। সে ধারণা করে যে, তার
অর্থ তাকে অমর করে রাখবে;
৪। কখন ও না, সে
অবশ্যই এ নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়;
৫। হুমা কী, তা
তুমি কি জান?
৬। এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত হুতাশন,
৭। যা হৃদয়কে গ্রাস করবে;
৮। নিশ্চয়ই এ তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে।
৯। দীর্ঘায়িত স্তম্ভ সমূহে।
--
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ চরম দুর্ভোগ
রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে যে অগোচরে অন্যের নিন্দে করে এবং সাক্ষাতে
ধিক্কার দেয়। এর বর্ণনা
هَمَّازٍ
مَّشَّاء بِنَمِيمٍ
(পশ্চাতে নিন্দাকারী, যে একের কথা অপরের নিকট
লাগিয়ে বেড়ায়) (৬৮ঃ১১) এ আয়াতের তাফসীরে গত হয়েছে।
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন যে, এর অর্থ হলো খোটাদানকারী এবং গীবতকারী। রবী ইবনে আনাস
(رضي الله عنه) বলেন যে, সামনে মন্দ বলাকেও (هُمَزَةٍ)
বলা হয় এবং অসাক্ষাতে নিন্দে করাকে বলে। হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলো মুখের
ভাষায় এবং চোখের ইশারায় আল্লাহর বান্দাদেরকে কষ্ট দেয়া। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, (هُمَزَةٍ) এর অর্থ হলো হাত এবং চোখ দ্বারা কষ্ট দেয়া এবং (لُّمَزَةٍ)এর অর্থ মুখ বা জিহ্বা দ্বারা কষ্ট দেয়া। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা আখফাস ইবনে
শুরায়েককে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এ আয়াত কোন নির্দিষ্ট
ব্যক্তির উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয়নি।
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ যে অর্থ জমায়
ও তা বারবার গণনা করে । যেমন অন্যত্র রয়েছেঃ অর্থাৎ “যে সম্পদ পুঞ্জীভূত এবং
সংরক্ষিত করে রেখেছিল।”
হযরত
কাব (রঃ) বলেনঃ সারাদিন সে অর্থ সম্পদ উপার্জনের জন্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখলো এবং
রাত্রে পচা গলা লাশের মত পড়ে রইলো।
আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ সে মনে করে যে, তার ধন সম্পদ তার কাছে
চিরকাল থাকবে। কখনো না। অবশ্যই সে নিক্ষিপ্ত হবে হুমায়। হে নবী (ﷺ)!
তুমি কি জান হুতামাহ কি?
তা
তুমি জান না। তা হলো আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত হুতাশন। যা হৃদয়কে গ্রাস করবে।
জ্বালিয়ে তাদেরকে ভষ্ম করে দিবে, কিন্তু তারা মৃত্যুবরণ করবে না। হযরত সাবিত বানানী
(রঃ) এ আয়াত তিলাওয়াত করে যখন এর অর্থ বর্ণনা করতেন তখন কেঁদে ফেলতেন এবং বলতেনঃ “আল্লাহর আযাব তাদেরকে
ভীষণ যন্ত্রণা দিয়েছে।"
মুহাম্মদ
ইবনে কা'ব (রঃ) বলেনঃ
প্রজ্জ্বলিত আগুন কণ্ঠনালী পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তারপর ফিরে আসে, আবার পৌঁছে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ এ আগুন তাদের
উপর আবদ্ধ করে দেয়া হবে সুদীর্ঘ স্তম্ভসমূহের মধ্যে। সূরা বালাদ’ এর তাফসীরেও এ ধরণের
বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি মারফু হাদীসেও এ রকম বর্ণনা রয়েছে। আগুনের
স্তম্ভের মধ্যে লম্বা লম্বা দরজা রয়েছে।
হযরত ইবনে মাসউদের (رضي الله عنه) কিরআত (عَمَدٍ) রয়েছে। ঐ সব
জাহান্নামীদের স্কন্ধে শিকল বাধা থাকবে। লম্বা লম্বা স্তম্ভের মধ্যে আবদ্ধ করে
তাদের উপর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। সেই আগুনের স্তম্ভের মধ্যে তাদেরকে
নিকৃষ্ট ধরনের শাস্তি দেয়া হবে। আবু সালিহ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে তাদের
জন্যে ভারী বেড়ী এবং শিকল থাকবে। তাতে তাদেরকে বন্দী করে দেয়া হবে।
(সূরাঃ হুমাযাহ এর তাফসীর
সমাপ্ত)
No comments:
Post a Comment