সূরাঃ কুরাইশ/১০৬, মাক্কী | (আয়াতঃ ৪, রুকূঃ ১)।



এ সূরার ফযীলত সম্পর্কে ইমাম বায়হাকী (রঃ) তাঁর কিতাবুল খিলাফিয়্যাতএ একটি গারীব হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হলোঃ হযরত উম্মিহানী বিনতে আবী তালিব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ ()বলেছেনঃআল্লাহ্ তা'আলা কুরায়েশদেরকে সাতটি ফযীলত প্রদান করেছেন। (এক)আমি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। (দুই) নবুওয়াত তাদের মধ্যে রয়েছে। (তিন) তারা আল্লাহর ঘরের তত্ত্বাবধায়ক। (চার) তারা যমযম কূপের পানি পরিবেশনকারী। (পাঁচ) আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে হস্তী অধিপতিদের উপর বিজয় দান করেছেন। (ছয়) দশবছর পর্যন্ত তারা আল্লাহর ইবাদত করেছে যখন অন্য কেউ ইবাদত করতো না। (সাত) তাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলা কুরআন কারীমের একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন।অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ () পাঠ করেনঃ
(করুণাময়, কৃপানিধান আল্লাহর নামে শুরু করছি)
১। যেহেতু কুরায়েশের আসক্তি আছে,
২। আসক্তি আছে তাদের শীত ও গ্রীষ্ম সফরের।
৩। অতএব তারা ইবাদত করুক - এই গৃহের প্রতিপালকের।
৪। যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার্যদান করেছেন এবং ভয় হতে তাদেরকে নিরাপদ করেছেন।
--
কুরআনের বর্তমান উসমানী (رضي الله عنه) সংস্করণের বিন্যাসে এ সূরাটিকে সূরা ফীল হতে পৃথকভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে। উভয় সূরার মধ্যে (بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ) দ্বারা পার্থক্য সৃষ্টি করা হয়েছে। বিষয়বস্তুর দিক থেকে এ সূরার্টিও সূরা ফীল এরই অনুরূপ। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রঃ), আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) প্রমুখ গুরুজন যে ব্যাখ্যা করেছেন তাতে বলা হয়েছেঃ আমি মক্কা হতে হাতীদের ফিরিয়ে রেখেছি এবং হাতী ওয়ালাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি। কুরায়েশদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যে এবং শান্তিপূর্ণভাবে মক্কায় অবস্থানের জন্যেও এ সূরার বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে এরূপ ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। আবার এই অর্থও লিখিত হয়েছে যে, শীত-গ্রীষ্ম যে কোন ঋতুতে কুরায়েশরা দূর দূরান্তে শান্তিপূর্ণভাবে সফর করতোকেননা, মক্কার মত সম্মানিত শহরে বসবাস করার কারণে সবাই তাদের সম্মান করতোতাদের সঙ্গে যারা থাকতো তারাও শান্তিপূর্ণভাবে সফর করতে সক্ষম হতোএকইভাবে নিজ দেশেও তারা সর্বপ্রকার নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা লাভ করতোযেমন কুরআনের অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ

أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا آمِنًا وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ

অর্থাৎতারা কি দেখে না যে, আমি হরমকে শান্তিমূলক স্থান হিসেবে মনোনীত করেছি, অথচ লোকদেরকে তাদের চতুর্দিক হতে ছিনতাই করা হয়?” (২৯ ও ৬৭) কিন্তু সেখানে যারা অবস্থান করে তারা সম্পূর্ণ নির্ভয় ও নিশ্চিন্ত থাকে।

ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, (لِإِيلَافِ) এর মধ্যে প্রথম যে (لام) টি রয়েছে ওটা বিস্ময় প্রকাশক (لام)এবং উভয় সূরা অর্থাৎ সূরা ফীল এবং সূরা লিঈলাফি কুরাইশ সম্পূর্ণ পৃথক। এ ব্যাপারে মুসলমানদের ইজমা রয়েছে।
আল্লাহ্ তা'আলা কুরায়েশদের প্রতি তাঁর নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেনঃ এই গৃহের মালিকের ইবাদত করা তাদের উচিত, যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং ভীতি হতে তাদেরকে নিরাপত্তা দান করেছেন। যেমন আল্লাহ্ পাক অন্য জায়গায় বলেনঃ

إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ رَبَّ هَذِهِ الْبَلْدَةِ الَّذِي حَرَّمَهَا وَلَهُ كُلُّ شَيْءٍ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ

অর্থাৎহে নবী ()! তুমি বলে দাও আমাকে শুধু এ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, আমি এই শহরের প্রভুর ইবাদত করবো যিনি ওকে হম বানিয়েছেন, যিনি সকল জিনিষের মালিক। আমাকে আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (২৭ ঃ ৯১) সুতরাং আল্লাহ্ তা'আলা বলছেনঃ যিনি ক্ষুধায় আহার্য দিয়েছেন এবং ভয়ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করেছেন তাঁর ইবাদত কর এবং ছোট বড় কোন কিছুকে তার অংশীদার করো না। আল্লাহ্ তাআলার এ আদেশ যে পালন করবে আল্লাহ্ তাকে দুনিয়ায় ও আখেরাতে সুখে-শান্তিতে কালাতিপাত করাবেন। পক্ষান্তরে তার অবাধ্যাচরণ যে করবে তার ইহকালের শান্তিকেও অশান্তিতে পরিণত করা হবে এবং আখেরাতেও সে শান্তির পরিবর্তে ভয়ভীতি ও হতাশার সম্মুখীন হবে। যেমন আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

وَضَرَبَ اللّهُ مَثَلاً قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُّطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِّن كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللّهِ فَأَذَاقَهَا اللّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُواْ يَصْنَعُونَ
وَلَقَدْ جَاءهُمْ رَسُولٌ مِّنْهُمْ فَكَذَّبُوهُ فَأَخَذَهُمُ الْعَذَابُ وَهُمْ ظَالِمُونَ

অর্থাৎআল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেথায় আসতো সর্বদিক হতে ওর প্রচুর জীবনোপকরণ; অতঃপর ওটা আল্লাহ্র অনুগ্রহ অস্বীকার করলো; ফলে, তারা যা করতো তজ্জন্যে আল্লাহ্ তাদেরকে আস্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের। তাদের নিকট তো এসেছিল এক রাসূল তাদেরই মধ্য হতে, কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করেছিল; ফলে, সীমা লংঘন করা অবস্থায় শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করলো” (১৬ঃ ১১২-১১৩)।

একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ () বলেছেনঃহে কুরায়েশগণ! আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের জন্যে আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করেছেন, ঘরে বসিয়ে তোমাদেরকে পানাহার করিয়েছেন, চতুর্দিকে অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও তোমাদেরকে তিনি শান্তি ও নিরাপত্তা দান করেছেন। এরপরও তোমাদের কি হলো যে, তোমরা এই বিশ্ব প্রতিপালকের ইবাদত করবে না এবং তাঁর তাওহীদ বা একত্ববাদকে অবিশ্বাস করবে? তোমাদের উপর কি এমন বিপদ আপতিত হলো, যে কারণে তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যদের সামনে মাথানত করবে?”
(সূরাঃ কুরাইশ এর তাফসীর সমাপ্ত)


No comments:

Post a Comment