আবার এটাকে মাদানী সূরাও বলা হয়েছে।
--
করুণাময়, কৃপানিধান আল্লাহর নামে শুরু
করছি।
১। আমি অবশ্যই তোমাকে কাওসার দান করেছি,
২। সুতরাং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কর এবং
কুরবানী কর।
৩। নিশ্চয় তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই তো নির্বংশ।
--
মুসনাদে আহমদে হযরত আনাস ইবনে
মালিক (رضي الله عنه)
হতে বর্ণিত আছে যে,
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)
কিছুক্ষণ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়েছিলেন। হঠাৎ মাথা তুলে হাসিমুখে তিনি বললেন অথবা তার
হাসির কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ “এই মাত্র আমার উপর একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে। তারপর
তিনি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ে সূরা কাওসার পাঠ করলেন। তারপর তিনি
সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “কাওসার কি তা কি তোমরা জান?" উত্তরে তারা বললেনঃ “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই (ﷺ)
ভাল জানেন।”
তখন
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ
“কাওসার
হলো একটা জান্নাতী নহর। তাতে বহু কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ আমাকে
এটা দান করেছেন। কিয়ামতের দিন আমার উম্মত সেই কাওসারের ধারে সমবেত হবে। আসমানে যতো
নক্ষত্র রয়েছে সেই কাওসারের পিয়ালার সংখ্যাও ততো। কিছু লোককে কাওসার থেকে
সরিয়ে দেয়া হবে তখন আমি বলবোঃ হে আমার প্রতিপালক! এরা আমার উম্মত!” তখন তিনি আমাকে বলবেনঃ “তুমি জান না, তোমার (ইন্তেকালের) পর
তারা কত রকম বিদআত আবিষ্কার করেছে!”
হাদীস শরীফে রয়েছে যে, সেই কাওসারের দুটি ধারা
আকাশ থেকে অবতরণ করবে।
সুনানে নাসাঈতে রয়েছে যে, এ ঘটনা মসজিদে নববীতে (ﷺ)
ঘটেছে। এজন্যেই অধিকাংশ কারী বলেন যে, এ সূরা মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। অধিকাংশ ফিকাহবিদ এ হাদীস থেকেই
ব্যাখ্যা করেছেন যে,
বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহীম’
প্রত্যেক
সূরার সাথেই অবতীর্ণ হয়েছে এবং এটা প্রত্যেক সূরার পৃথক আয়াত।
মুসনাদের অন্য একটি হাদীসে
রয়েছে যে,
রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)
এ সূরার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে বলেনঃ “আমাকে কাওসার দান করা হয়েছে। কাওসার একটি প্রবাহিত
ঝর্ণা বা নহর,
কিন্তু
গর্ত নয়। ওর দু'পাশে মুক্তার তৈরি তাঁবু
রয়েছে। ওর মাটি খাটি মিশকের ওর পাথরও খাঁটি মুক্তাদ্বারা নির্মিত।
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে যে, মিরাজের রাত্রে
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আসমানে জান্নাতে এ নহর দেখেছিলেন। এবং হযরত জিবরাঈল (আঃ)কে
জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ
“এটা
কোন নহর?”
হযরত
জিবরাঈল (আঃ) উত্তরে বলেছিলেনঃ “এর নাম কাওসার, যে কাওসার আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা আপনাকে দান করেছেন।
এ ধরনের বহু হাদীস রয়েছে।
অন্য এক হাদীসে আছে যে, কাওসারের পানি দুধের
চেয়েও বেশী সাদা,
মধুর
চেয়েও বেশী মিষ্ট। সেই কাওসারের তীরে লম্বাগ্রীবা বিশিষ্ট পাখিরা বসে রয়েছে।
হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) একথা শুনে বললেনঃ “সে সব পাখি তো খুব সুন্দর!” নবী করীম (ﷺ)
বললেনঃ ‘সেগুলো খেতেও খুব
সুস্বাদু। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত আনাস (رضي
الله عنه) রাসূলুল্লাহকে (ﷺ)
জিজ্ঞেস করলেনঃ
“কাওসার
কি?” উত্তরে তিনি এ হাদীসটি
বর্ণনা করলে হযরত উমার (رضي الله عنه) পাখিগুলো সম্পর্কে উপরোক্ত কথা বলেন।১
হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)
বলেন এ নহরটি জান্নাতের মধ্যস্থলে অবস্থিত।২
হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে আরো বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি কাওসারের পানি ঝরার শব্দ শুনতে পছন্দ করে
সে যেন তার অঙ্গুলিদ্বয় তার কর্ণদ্বয়ে রাখে।৩
প্রথমতঃ এ হাদীসের সনদ সমার্থ নয়, দ্বিতীয়তঃ অর্থ হলো কানে আঙ্গুল দিয়ে কাওসারের পানি
ঝরার মত শব্দ শোনা যাবে,
অবিকল
সেই আওয়াজই যে শোনা যাবে এমন নয়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
সহীহ বুখারী শরীফে হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে যে, কাওসারের মধ্যে ঐ কল্যাণ নিহিত রয়েছে যা আল্লাহ তা'আলা খাস করে তাঁর নবী (ﷺ)-কে
দান করেছেন। আবু বাশার (রঃ) সাঈদ ইবনে জুবায়ের (رضي
الله عنه)কে বলেনঃ লোকদের তো ধারণা এই
যে, কাওসার হলো জান্নাতের
একটি নহর। তখন হযরত সাঈদ (রঃ) বললেনঃ জান্নাতে যে নহরটি রয়েছে সেটা ঐ কল্যাণের
অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ খাস করে তার নবী (ﷺ)-কে
প্রদান করেছেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)
হতে আরো বর্ণিত আছে যে,
কাওসার
হলো বহু কল্যান। বহু সংখ্যক তাফসীরকার এরকমই লিপিবদ্ধ করেছেন। হযরত মুজাহিদ (রঃ)
বলেন যে,
কাওসার
দ্বারা দুনিয়ার ও আখেরাতের বহু প্রকারের কল্যাণের কথা বুঝানো হয়েছে। ইকরামা (রঃ)
বলেন যে,
কাওসার
দ্বারা নবুওয়াত,
কুরআন
ও পরকালের পুণ্যকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস - (رضي الله عنه)
কাওসারের তাফসীরে নহরে কাওসারও বলেছেন।
তাফসীরে ইবনে জারীরে হযরত ইবনে
আব্বাস (رضي الله عنه)
হতে বর্ণিত আছে যে,
কাওসার
হলো জান্নাতের একটি নহর যার উভয় তীর স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত। ইয়াকূত ও
মণি-মুক্তার উপর ওর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ঐ কাওসারের পানি বরফের চেয়েও অধিক সাদা
এবং মধুর চেয়েও অধিক মিষ্টি।৪
তাফসীরে ইবনে জারীরে বর্ণিত
আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
হযরত হামযার (رضي الله عنه) বাড়িতে আগমন করেন। হযরত হামযা (رضي الله عنه) ঐ সময়
বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী বানূ নাজ্জার গোত্রীয়া মহিলা বাড়ীতে অবস্থান
করছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে
বললেনঃ “আমার স্বামী এই মাত্র
আপনার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। সম্ভবতঃ তিনি বানূ নাজ্জারের
ওখানে আটকা পড়ে গেছেন। আপনি এসে বসুন।” অতঃপর হযরত হামযার (رضي
الله عنه) স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর
সামনে মালীদা (এক প্রকার খাদ্য) পেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
তা আহার করলেন। হযরত হামযা’র (رضي الله عنه)
স্ত্রী আনন্দের সুরে বললেনঃ “আপনি নিজেই আমাদের গরীব খানায় তাশরীফ এনেছেন এটা
আমাদের পরম সৌভাগ্য। আমি তো ভেবেছিলাম যে আপনার দরবারে হাজির হয়ে আপনাকে হাউযে
কাওসার প্রাপ্তি উপলক্ষে মুবারকবাদ জানাবো। এই মাত্র হযরত আবু আম্মারাহ (رضي الله عنه)
আমার কাছে এই সুসংবাদ পৌঁছিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন
বললেনঃ “হ্যা, সেই হাউযে কাওসারের মাটি
হলো ইয়াকূত,
পদ্মরাগ, পান্না এবং মণি মুক্তা।"৫
বহু সংখ্যক সাহাবী এবং
তা'বিয়ীর বর্ণনা থেকে
প্রমাণিত হয়েছে যে,
কাওসার
একটি নহরের নাম।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে নবী (ﷺ)!
নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাওসার দান করেছি। অতএব তুমি স্বীয় প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে
নামায পড় এবং কুরবানী কর। নিশ্চয় তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীরাই তো নির্বংশ।
অর্থাৎ হে নবী (ﷺ) তুমি নফল নামায ও কুরবানীর মাধ্যমে লা-শারীক আল্লাহর ইবাদত কর।
যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ্ পাক বলেনঃ
قل
ان صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي لله رب العلمين . لا شريك له وبذلك امرت وانا اول
المسلمين.
অর্থাৎ “বলঃ আমার নামায, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ
জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি তাই আদিষ্ট
হয়েছি এবং আত্মসমর্পনকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম।”
- (৬ ঃ
১৬২-১৬৩)।
কুরবানী
দ্বারা এখানে উট বা অন্য পশু কুরবানীর কথা বলা হয়েছে। মুশরিকরা সিজদা’ এবং কুরবানী আল্লাহ্
ছাড়া অন্যদের নামে করতো। এখানে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা নির্দেশ দিচ্ছেনঃ তোমরা
শুধুমাত্র আল্লাহ্রই ইবাদত করো। যেমন আল্লাহ্ পাক অন্য জায়গায় বলেনঃ
وَلاَ
تَأْكُلُواْ مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ
অর্থাৎ “যে পশু কুরবানীতে
আল্লাহর নাম নেয়া হয় না তা তোমরা খেয়োনা, কেননা, এটা ফিসক বা
অন্যায়াচরণ।” -(৬ ঃ ১২১)
এটাও বলা
হয়েছে যে,
(انحر)
এর
অর্থ হলো নামাযের সময়ে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকে বাঁধা । এটা হযরত আলী (رضي الله عنه)
হতে গায়ের সহীহ সনদের সাথে বর্ণিত হয়েছে। হযরত শাবী (রঃ) এ শব্দের তাফসীর এটাই
করেছেন।
হযরত
আবু জাফর বাকির (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলো নামায শুরু করার সময় হাত উঠানো। একথাও বলা হয়েছে যে, এর ভাবার্থ হলোঃ বুক
কিবলার দিক রেখে কিবলামুখী হওয়া। এই তিনটি উক্তিই ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা
করেছেন।
মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে এ
জায়গায় একটি নিতান্ত মুনকার হাদীস বর্ণিত আছে। তাতে আছে যে, এ সূরা অবতীর্ণ হওয়ার
পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ
“হে
জিবরাঈল (আঃ)!(ؤانحر) এর
অর্থ কি?”
উত্তরে
হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ
“এর
অর্থ কুরবানী নয়,
বরং
আপনার প্রতিপালক আপনাকে নামাযে তাকবীরে তাহরীমার সময়, রুকুর সময়, রুকু হতে মাথা উঠানোর
সময় এবং সিজদাহ করার সময় দু’হাত তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। এটাই আমাদের এবং যে সব ফেরেশতা
সপ্তম আকাশে রয়েছেন তাদের নামায। প্রত্যেক জিনিষের সৌন্দর্য রয়েছে, নামাযের সৌন্দর্য হলো
প্রত্যেক তাকবীরের সময় হাত উঠানো।”
হযরত আতা খুরাসানী (রঃ) বলেন
যে, (ؤانحر) এর অর্থ হলো নিজের পিঠ
রুকু হতে উঠানোর সময় সমতল করে বুক প্রকাশ করো অর্থাৎ স্বস্তি অর্জন করো। এগুলো সবই গারীব বা
দুর্বল উক্তি।
(نحر) এর অর্থ কুরবানীর পশু
জবাহ করা এ উক্তিটিই হলো সঠিক উক্তি। এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
ঈদের নামায শেষ করার পরপরই নিজের কুরবানীর পশু যবাহ করতেন এবং বলতেনঃ “যে আমাদের নামাযের মত
নামায পড়েছে এবং আমাদের কুরবানীর মত কুরবানী করেছে সে শরীয়ত সম্মতভাবে কুরবানী
করেছে। আর যে ব্যক্তি (ঈদের) নামাযের পূর্বেই কুরবানী করেছে তার কুরবানী আদায়
হয়নি।” একথা শুনে হযরত আবু
বারদাহ ইবনে দীনার (رضي الله عنه) দাড়িয়ে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)। আজকের দিনে গোশতের
চাহিদা বেশী হবে ভেবেই কি আপনি নামাযের পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছেন?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বললেনঃ “তা হলে তো খাওয়ার গোশতই
হয়ে গেল অর্থাৎ কুরবানী হলো না।” সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)!
বর্তমানে আমার কাছে একটি বকরীর শাবক রয়েছে, কিন্তু ওটা দুটি বকরীর চেয়েও আমার কাছে অধিক প্রিয়।
এ বকরীর শাবকটি কি আমার জন্যে যথেষ্ট হবে?” রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
উত্তরে বললেনঃ
“হ্যা, তোমার জন্যে যথেষ্ট হবে
বটে, কিন্তু তোমার পরে ছয়
মাসের বকরী শাবক অন্য কেউ কুরবানী করতে পারবে না।”
ইমাম আবূ জাফর ইবনে জারীর (রঃ)
বলেনঃ তার কথাই যথার্থ যে বলে যে, এর অর্থ হলোঃ নিজের সকল নামায শুধুমাত্র আল্লাহর
জন্যে আদায় করো,
তিনি
ছাড়া অন্য কারো জন্যে আদায় করো না। তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর যিনি তোমাকে এরকম
বুযুর্গী ও নিয়ামত দান করেছেন যে রকম বুযুর্গী ও নিয়ামত অন্য কাউকেও দান করেননি।
এটা একমাত্র তোমার জন্যেই নির্ধারিত করেছেন। এই উক্তিটি খুবই উত্তম।
মুহাম্মদ ইবনে কা'ব কারাযী (রঃ) এবং আতা
(রঃ) একই কথা বলেছেন। আল্লাহ তাআলা সুরার শেষ আয়াতে বলেছেনঃ নিশ্চয় তোমার প্রতি
বিদ্বেষ পোষনকারীই তো নির্বংশ। অর্থাৎ যারা তোমার (হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর)
শত্রুতা করে,
তারাই
অপমানিত,
লাঞ্ছিত, তাদেরই লেজকাটা।
এই আয়াত আস ইবনে
ওয়ায়েল সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। এই দুবৃত্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর
আলোচনা শুনলেই বলতোঃ
“ওর
কথা রাখো,
ওর
কথা রাখো,
ওর
কোন পুত্র সন্তান নেই। মৃত্যুর পরই সে বেনাম-নিশান হয়ে যাবে। (নাউযুবিল্লাহ)।
আল্লাহ তা'আলা তখন এ সূরা অবতীর্ণ
করেন।
শামর ইবনে আতিয়্যাহ (রঃ) বলেন
যে, উকবা ইবনে আবী মুঈত
সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন
যে, কা'ব ইবনে আশরাফ এবং
কুরায়েশদের একটি দল সম্পর্কে এ সূরা অবতীর্ণ হয়।
মুসনাদে বাযারে হযরত ইবনে
আব্বাস (رضي الله عنه)
হতে বর্ণিত আছে যে,
কা'ব ইবনে আশরাফ যখন
মক্কায় আসে তখন কুরায়েশরা তাকে বলেঃ “আপনি তো তাদের সর্দার, আপনি কি ঐ ছোকরাকে (হযরত
মুহাম্মদ (ﷺ)-কে দেখতে পান? সে সমগ্র জাতি থেকে পৃথক
হয়ে আছে, এতদসত্ত্বেও নিজেকে
সবচেয়ে ভাল ও শ্রেষ্ঠ মনে করছে। অথচ আমরা হাজীদের বংশধর, কাবাগৃহের তত্ত্বাবধায়ক এবং যমযম কূপের দেখাশোনাকারী।" দুবৃত্ত কা'ব
তখন বললোঃ “নিঃসন্দেহে তোমরা তার
চেয়ে উত্তম। আল্লাহ তা'আলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ
করেন।”৬
হযরত আতা' (রঃ) বলেন যে, এ আয়াত আবু লাহাব
সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর
সন্তানের ইন্তেকালের পর এ দুর্ভাগা দুবৃত্ত মুশরিকদেরকে বলতে লাগলো “আজ রাত্রে মুহাম্মদ (ﷺ)-এর
বংশধারা বিলোপ করা হয়েছে।"
আল্লাহ
তা'আলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ
করেন। হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে এ উক্তি বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)
এটাও বলেছেন যে,
এখানে
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সমস্ত শত্রুকেই বুঝানো হয়েছে। যাদের নাম নেয়া হয়েছে এবং
যাদের নাম নেয়া হয়নি তাদের সকলকেই বুঝানো হয়েছে।
(আবতার) শব্দের অর্থ হলো একাকী।
আরবে এ প্রচলন রয়েছে যে,
যখন
কারো একমাত্র সন্তান মারা যায় তখন তাকে ‘আবতার’ বলা হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর
সন্তানদের ইন্তেকালের পর শত্রুতার কারণে তারা তাকে ‘আবতার বলছিল। আল্লাহ
তাআলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। আবতার’ এর অর্থ দাঁড়ালোঃ যার মৃত্যুর পর তার সম্পর্কিত আলোচনা, নাম নিশানা মুছে যায়।
মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সম্পর্কেও ধারণা করেছিল যে, সন্তান বেঁচে থাকলে তার
আলোচনা জাগরুক থাকতো। এখন আর সেটা সম্ভব নয়। অথচ তারা জানে না যে, পৃথিবী টিকে থাকা অবধি
আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রিয় নবী (ﷺ)-এর
নাম টিকিয়ে রাখবেন। নবী করীম (ﷺ)-এর
শরীয়ত চিরকাল বাকি থাকবে। তার আনুগত্য সকল শ্রেণীর মানুষের জন্যে অত্যাবশ্যক ঘোষণা
করা হয়েছে। তাঁর প্রিয় ও পবিত্র নাম সকল মুসলমানের মনে ও মুখে রয়েছে। কিয়ামত
পর্যন্ত তাঁর নাম আকাশতলে উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান থাকবে। জলে স্থলে সর্বদা তার নাম আলোকিত
হতে থাকবে। আল্লাহ তা'আলা কিয়ামত পর্যন্ত
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এবং
তাঁর আল ও আসহাবের প্রতি দরূদ ও সালাম সর্বাধিক পরিমাণে প্রেরণ করুন! আমীন!
(সূরাঃ কাওসার এর তাফসীর
সমাপ্ত)
===============
❏ টীকাঃ
১. এ হাদীসটি মুসনাদে আহমদে
বর্ণিত হয়েছে।
২, এ হাদীসটি মুনকার বা
অস্বীকৃত।
৩. সনদের দিক দিয়ে এ হাদীসটি
মুনকাতা’
বা
ছেদ কাটা।
৪. ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং
ইমাম ইববে মাজাহ (রঃ)এ হাদীসটি মারফু রূপেও বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ)
এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন।
৫. খারামা ইবনে উসমান
নামক এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী দুর্বল। তবে এটাকে হাসান বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
৬. এ হাদীসের সনদ সহীহ বা
বিশুদ্ধ।
No comments:
Post a Comment