জামে তিরমিযীতে হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে এসে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে পড়িয়ে দিন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বললেনঃ (الر) যুক্ত তিনটি সূরা পাঠ করো।” লোকটি বললো “আমি বৃদ্ধ হয়ে
গেছি, স্মৃতিশক্তি আমার
দুর্বল হয়ে গেছে এবং জিহ্বা মোটা হয়ে গেছে (সুতরাং এই সূরাগুলো পড়া আমার পক্ষে
কঠিন)।” তখন রাসূলুল্লাহ
(সঃ) বললেন, “আচ্ছা, তাহলে , (حم) যুক্ত সূরাগুলো পড়।"
লোকটি পুনরায় একই ওযর পেশ করলো। তখন নবী করীম (সঃ) তাকে বললেন “তাহলে :
(يسبح) বিশিষ্ট তিনটি সূরা পাঠ করো।” লোকটি ঐ উক্তিরই
পুনরাবৃত্তি করলো এবং বললোঃ আমাকে একটি সূরার সবক দিন।” তখন রাসূলুল্লাহ
(সঃ) তাকে (إِذَا زُلْزِلَتِ) এই সূরাটিই পাঠ করালেন। পড়া শেষ করার পর লোকটি বললোঃ “আল্লাহর কসম! আমি
কখনো এর অতিরিক্ত কিছু করবো না।” এই কথা বলে লোকটি চলে যেতে শুরু করলো। তখন নবী করীম (সঃ) বললেনঃ “এ লোকটি সাফল্য অর্জন করেছে ও মুক্তি পেয়ে গেছে।”
তারপর তিনি বললেনঃ “তাকে একটু ডেকে আনো।” লোকটিকে ডেনে আনা
হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ আমাকে ঈদুল আযহার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই
দিনকে আল্লাহ তা'আলা এই উম্মতের
জন্যে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। একথা শুনে লোকটি বললোঃ “যদি আমার কাছে
কুরবানীর পশু না থাকে এবং কেউ আমাকে দুধ পানের জন্যে একটা পশু উপঢৌকন দেয় তবে কি
আমি ঐ পশুটি যবাহ করে ফেলবো?” রাসূলুল্লাহ উত্তরে বললেনঃ না, না (এ কাজ করো না) বরং চুল ছাটিয়ে নাও, নখ কাটিয়ে নাও, গোঁফ ছোট করো এবং
নাভীর নিচের লোম পরিষ্কার করো, এ কাজই আল্লাহর কাছে তোমার জন্যে পুরোপুরি কুরবানী রূপে গণ্য হবে।” ১
জামে তিরমিযীতে হযরত আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)
বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি এই সূরা
পাঠ করে সে অর্ধেক কুরআন পাঠের সওয়াব লাভ করে।” ২
অন্য এক হাদীসে রয়েছে যে, (إِذَا زُلْزِلَتِ) সূরাটি অর্ধেক কুরআনের
সমতুল্য, (قُلْ هُوَ اللَّـهُ أَحَدٌ) সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য এবং (قُلْ يَا
أَيُّهَا الْكَافِرُونَ) এ সূরাটি কুরআনের এক
চতুর্থাংশের সমতুল্য।৩
অন্য একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)
তাঁর সাহাবীদের একজনকে বলেনঃ “তুমি কি বিয়ে করেছো?” লোকটি উত্তরে বলেনঃ “জ্বী, না। আমার বিয়ে
করার মত সামর্থ্য নেই।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)
তখন বললেনঃ (قُلْ هُوَ اللَّـهُ
أَحَدٌ)
“এ সূরাটি কি তোমার
সাথে নেই (অর্থাৎ এ সূরাটি কি তোমার মুখস্ত নেই)?” লোকটি জবাবে বললেনঃ “হ্যা (তা তো আছেই)।" রাসূলুল্লাহ (সঃ)
বললেনঃ “এতে কুরআনের এক
তৃতীয়াংশ হলো। তারপর বললেনঃ “তোমার সাথে কি (إِذَا جَاء نَصْرُ اللَّهِ
وَالْفَتْحُ) এই সূরাটি নেই?” লোকটি বললেনঃ “হ্যা', আছে। নবী করীম (সঃ)
বললেনঃ “এতে কুরআনের এক
চতুর্থাংশ হলো।” এরপর বললেন (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ) “এ সূরাটি কি তোমার জানা নেই?” লোকটি জবাব দিলেনঃ “হ্যা আছে।” রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)
বললেনঃ “এটা কুরআনের এক
চতুর্থাংশ” অতঃপর বললেনঃ “তোমার কি (إِذَا
زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ) এ সূরাটি মুখস্ত নেই?” লোকটি উত্তরে
বললেনঃ “হ্যা, অবশ্যই আছে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)
বললেনঃ “এটাও কুরআনের এক
চুতর্থাংশ। যাও, এবার বিয়ে করে
নাও।”৪
--
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১। পৃথিবী যখন কম্পনে প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে,
২। এবং পৃথিবী যখন তার ভারসমূহ বের করে দিবে,
৩। এবং মানুষ বলবেঃ এর কি হলো?
৪। সেইদিন পৃথিবী তার
বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে,
৫। তোমার প্রতিপালক তাকে
আদেশ করবেন,
৬। সেইদিন মানুষ ভিন্ন
ভিন্ন দলে বের হবে, কারণ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো হবে।
৭। কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তাও দেখবে।
৮। এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে।
--
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) (إِذَا
زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا) এ আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ জমীনকে যখন ভীষণ কম্পনে
কম্পিত করা হবে, নীচে থেকে উপর
পর্যন্ত প্রকম্পনে ভিতরের সমস্ত মৃতকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলা হবে। যেমন অন্যত্র
রয়েছেঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ
السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ
অর্থাৎ “হে মানুষ! ভয় কর তোমাদের
প্রতিপালককে; কিয়ামতের প্রকম্পন
এক ভয়ানক ব্যাপার।” (২২ ঃ ১) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ
- وَإِذَا الْأَرْضُ مُدَّتْ
وَأَلْقَتْ مَا فِيهَا وَتَخَلَّتْ
অথাৎ “এবং পৃথিবীকে যখন
সম্প্রসারিত করা হবে ও পৃথিবী তার অভ্যন্তরে যা আছে তা বাইরে নিক্ষেপ করবে ও
শূন্যগর্ভ হবে।” (৮৪ ঃ ৩-৪)।
সহীহ মুসলিমে হযরত আবু
হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জমীন তার কলেজার টুকরোগুলোকে উগরে দিবে এবং বাইরে নিক্ষেপ করবে। স্বর্ণ রৌপ্য
স্তম্ভের মত বাইরে বেরিয়ে পড়বে। হত্যাকারী সে সব দেখে বলবেঃ হায়! আমি এই ধন
সম্পদের জন্য অমুককে হত্যা করে ছিলাম, অথচ আজ ওগুলো এভাবে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, কেউ যেন ওগুলোর
দিকে ভুলেও তাকাচ্ছে না!" আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দুর্ব্যবহারকারী দুঃখ করে বলবেঃ “হায়! এই ধন
সম্পদের মোহে পড়ে আমি আমার আত্মীয় স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করিনি!" চোর বলবেঃ “হায়! এই মাল ধনের
জন্যে আমার হাত কেটে দেয়া হয়েছিল!” অতঃপর ওগুলো তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা ওগুলো হতে কিছুই গ্রহণ করবে না।”
মোটকথা, সেই ধন সম্পদ
এমনভাবে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকবে যে, ওগুলোর প্রতি কেউ চোখ তুলেও চাইবে না। মানুষ বিস্ময় বিস্ফারিত নেত্রে সেদিকে
তাকিয়ে বলবেঃ হায়! এগুলোর তো নড়া চড়া করার কোন শক্তি ছিল না। এগুলো তো স্তব্ধ নিথর হয়ে পড়ে থাকতো। আজ এগুলোর কি হলো যে, এমন থরথর করে কাঁপছে! পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত মৃতদেহ জমীন বের করে দিবে।
তখন মানুষ বলবেঃ এর কি হলো? জমীন ও আসমান
সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে দেয়া হবে। ঐ দৃশ্য সবাই দেখবে এবং সবাইকে
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে হাযির করা হবে। জমীন খোলাখুলি ও সুস্পষ্টভাবে
সাক্ষ্য দিবে যে, অমুক অমুক ব্যক্তি
তার উপর অমুক অমুক নাফরমানী করেছে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) এই
আয়াতটি পাঠ করে বললেনঃ “জমীনের বৃত্তান্ত
কি তা কি তোমরা জাননা?” সাহাবীগণ উত্তরে বললেনঃ 'আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই (সঃ) ভাল জানেন।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আদম সন্তান যে সব আমল জমীনে করেছে তার সব কিছু জমীন এভাবে প্রকাশ করে দিবে, যে অমুক ব্যক্তি
অমুক সময়ে অমুক জায়গায় এই এই পাপ ও এই এই পুণ্য কাজ করেছে।”৫
মু’জামে তিবরানীতে হযরত
রাবীআহ হাদাসী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জমীনের ব্যাপারে সাবধান থেকো। ওটা তোমাদের মা। ওর উপর যে ব্যক্তি যে পাপ বা
পুণ্য কাজ করবে সে তো খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করে দিবে।” এখানে অহী দ্বারা
আদেশ করা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা জমীনকে বলবেনঃ ‘বলে দাও। তখন সে
বলে দিবে। সেদিন মানুষ হিসাবের জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের দলে বিভক্ত হয়ে ফিরবে।
কেউ হবে পুণ্যবান এবং কেউ হবে পাপী। কেউ জান্নাতী হবে, আবার কেউ
জাহান্নামী হবে। এ অর্থও করা হয়েছে যে, এখান থেকে তারা পৃথক হবে, আর তারা মসবেত হবে না। এর কারণ হলো এই যে, তারা নিজেদের আমলসমূহ জেনে নিবে এবং ভালমন্দের প্রতিফল পেয়ে যাবে। এজন্যেই
শেষেও একথাই বলে দেয়া হয়েছে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)
হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)
বলেছেনঃ “ঘোড়ার মালিকরা তিন
প্রকারের। এক প্রকার হলো তারা যারা পুরস্কার ও পারিশ্রমিক লাভকারী। দ্বিতীয় প্রকার হলো তারা যাদের জন্যে ঘোড়া আবরণস্বরূপ।
তৃতীয় প্রকার হলো তারা যাদের জন্যে ঘোড়া বোঝাস্বরূপ অর্থাৎ তারা পাপী।
পুরস্কার বা পারিশ্রমিক
লাভকারী বলতে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা জিহাদের উদ্দেশ্যে ঘোড়া পালন করে। যদি ঘোড়ার
দেহে ও পায়ে শিথিলতা দেখা দেয় এবং ঐ ঘোড়া এদিক ওদিকের চারণ ভূমিতে বিচরণ করে
তাহলে এজন্যেও মালিক সওয়াব লাভ করবে। যদি ঘোড়ার রশি ছিড়ে যায় এবং ঐ ঘোড়াটি
এদিক ওদিক চলে যায় তবে তার পদচিহ্ন এবং মল মূত্রের জন্যেও মালিক সওয়াব বা পুণ্য
লাভ করবে। মালিকের পানি পান করাবার ইচ্ছা না থাকলেও ঘোড়া যদি কোন জলাশয়ে গিয়ে
পানি পান করে তাহলেও মালিক সওয়াব পাবে। এই ঘোড়া তার মালিকের জন্যে পুরোপুরি
পুণ্য ও পুরস্কারের মাধ্যম। দ্বিতীয় হলো ঐ ব্যক্তি যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়ার
জন্যে ঘোড়া পালন করেছে, যাতে প্রয়ােজনের
সময় অন্যের কাছে ঘোড়া চাইতে না হয়, কিন্তু সে আল্লাহর অধিকারের কথা নিজের ক্ষেত্রে এবং নিজের সওয়ারীর ক্ষেত্রে
বিস্মৃত হয় না। এই সওয়ারী ঐ ব্যক্তির জন্যে পর্দা স্বরূপ। আর তৃতীয়
হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে অহংকার এবং গর্বের কারণে এবং অন্যদের উপর জুলুম অত্যাচার করার
উদ্দেশ্যে ঘোড়া পালন করে, এই পালন তার উপর
একটা বোঝা স্বরূপ এবং তার জন্যে গুনাহ স্বরূপ।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)কে তখন জিজ্ঞেস করা হলোঃ “গাধা সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “আল্লাহ তা'আলা আমার প্রতি এই
স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অর্থবহ আয়াত অবতীর্ণ করেছেন যে, বিন্দুমাত্র পুণ্য এবং বিন্দুমাত্র পাপও প্রত্যেকে প্রত্যক্ষ করবে।”৬
হযরত ফারদাকের (রাঃ) চাচা
হযরত সাআ’সাআ ইবনে মুআবিয়া
(রাঃ) নবী (সঃ)-এর নিকট আগমন করলে তিনি তাঁর সামনে (فَمَن
يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَ) এ আয়াত দু'টি পাঠ করেন। তখন
হযরত সাআ’সাআ (রাঃ) বলেনঃ “এ আয়াত দু'টিই আমার জন্যে যথেষ্ট।
এর চেয়ে বেশী যদি নাও শুনি তবুও কোন অসুবিধা হবে না।”৭
সহীহ বুখারীতে হযরত আদী
ইবনে হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অর্ধেক খেজুর সাদকা করার মাধ্যমে হলেও এবং ভাল কথার মাধ্যমে হলেও আগুন হতে
আত্মরক্ষা করো।” একইভাবে সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ “পুণ্যের কাজকে কখনো হালকা মনে করো না, নিজের বালতি দিয়ে পানি তুলে কোন পিপাসার্তকে পান করানো অথবা কোন মুসলমান ভাই
এর সাথে অন্তরঙ্গ অনুভূতি সহকারে দেখা করাও পুণ্যের কাজ বলে মনে করবে।”
অন্য একটি সহীহ হাদীসে
রয়েছেঃ “হে নারীদের দল! তোমরা
তোমাদের প্রতিবেশীদের পাঠানো উপঢৌকনকে তুচ্ছ মনে করো না, যদিও তারা এটা
পায়ের গোড়ালীও অর্থাৎ খুরও পাঠায়।” অন্য একটি হাদীসে রয়েছেঃ “ভিক্ষুককে কিছু না কিছু দাও, আগুনে পোড়া একটা খুর হলেও দাও।”
মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত
হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)
বলেনঃ “হে আয়েশা (রাঃ)!
পাপকে কখনো তুচ্ছ মনে করো না। মনে রেখো, তারও হিসাব হবে।"
হযরত আনাস (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু বকর (রাঃ)
রাসুলুল্লাহর (সঃ) সাথে আহার করছিলেন এমন সময় এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। হযরত আবু বকর
(রাঃ) তখন খাবার হতে হাত তুলে নিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাপেরও বদলা আমাকে দেয়া হবে?” রাসূলুল্লাহ (সঃ)
উত্তরে বলেনঃ “হে আবু বকর (রাঃ)!
পৃথিবীতে তুমি যে সব দুঃখ কষ্ট ভোগ করেছে তাতে তোমার ছোট খাট পাপের প্রায়শ্চিত্ত
হয়ে গেছে, পুণ্যসমূহ তোমার
জন্যে আল্লাহর কাছে রক্ষিত রয়েছে। এগুলোর প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে কিয়ামতের দিন তোমাকে
প্রদান করা হবে।” ৮
অন্য একটি বর্ণনায় আছে
যে, এ সূরাটি হযরত আবু
বকর (রাঃ)-এর উপস্থিতিতে অবতীর্ণ হয়। তিনি শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “এই সূরাটি আমাকে
কাঁদিয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা করবেন না
এরূপ ধারণা করে তোমরা যদি গুনাহ না করতে তাহলে আল্লাহ তা'আলা অন্য কোন উম্মত
সৃষ্টি করতেন যারা ভুল করতো ও গুনাহ করতো, অতঃপর পরম করুণাময় আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করতেন।” ৯
মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন -
فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ
وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ
এ আয়াত দু'টি অবতীর্ণ হয় তখন তিনি
বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল
(সঃ)! আমি কি আমার সব আমলই দেখবো?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হ্যা।” তিনি জিজ্ঞেস
করলেনঃ “বড় বড় সব আমল?” রাসূলুল্লাহ (সঃ)
জবাব দিলেনঃ “হ্যা” তিনি আবার জিজ্ঞেস
করলেনঃ “ছোট ছোট সব আমল?” রাসূলুল্লাহ (সঃ)
উত্তরে বললেনঃ “হ্যা” তখন হযরত আবু সাঈদ
খুদরী (রাঃ) বললেনঃ “হায়, আফসোস!” রাসূলুল্লাহ (সঃ)
তখন বললেনঃ “হে আবু সাঈদ (রাঃ)!
খুশী হয়ে যাও, জেনে রেখো যে, আল্লাহ তা'আলা পুণ্যের পরিমাণ দশগুণ
হতে সাতশ গুণ পর্যন্ত দেন, এমনকি যাকে ইচ্ছা
করেন তার চেয়েও বেশী প্রদান করেন কিন্তু গুনাহ সমপরিমাণই থাকবে অথবা আল্লাহ
গুনাহগারকে ক্ষমা করে দিবেন। মনে রাখবে যে, কোন লোককে শুধু তার আমল মুক্তি দিতে পারবে না।” একথা শুনে হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) আপনাকেও নয়?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) জবাব দিলেনঃ “হ্যা, আমাকেও নয়। তবে
আল্লাহ তা'আলা আমাকে তাঁর
রহমত দ্বারা ঢেকে দিবেন।”১০
হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের
(রঃ) বলেন, যখন (وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ
عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا ) (অর্থাৎ “আহার্যের প্রতি
আসক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে (৭৬ ঃ ৮)।” যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন মুসলমানরা মনে করেন যে, তাঁরা সামান্য
জিনিস প্রদান করলে কোন বিনিময় প্রাপ্ত হবেন না। তাই, তাদের দরজায় ফকীর
মিকসীন আসলে তারা তাদেরকে এক আধটা খেজুর, রুটির টুকরা ইত্যাদি দেয়াকে বৃথা মনে করে শূন্য হস্তেই ফিরিয়ে দিতেন। তাঁরা
চিন্তা করতেন যে, যদি দিতে পারেন তবে
ভালো ও উৎকৃষ্ট কোন জিনিসই দিবেন। এ ধরনের চিন্তা একটি দল করতেন। অন্য কেটি দল মনে
করতেন যে, ছোট খাট পাপের জন্য
কৈফিয়ত তলব করা হবে না। যেমন কখনো মিথ্যা কথা বলা, এদিক ওদিক তাকানো, কারো গীবত করা
ইত্যাদি। তখন অবতীর্ণ হলো -
فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ
وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ
এই আয়াত দু'টি। অর্থাৎ “কেউ অণু পরিমাণ সৎকাজ করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলে তাও দেখবে।” তাদেরকে আরো বলা হলোঃ
ছোট খাট পুণ্য বা নেক কাজকে তুচ্ছ মনে করো, ওটা বড়রূপে দেখা দিবে। আর ছোট খাট পাপকেও তুচ্ছ মনে করো না। কেন না, এই ছোট খাট
পাপসমূহই একত্রিত হয়ে বিরাট আকার ধারণ করবে।”
এর অর্থ হলো ছোট
পিপীলিকা। অর্থাৎ আমলনামায় ছোট বড় সব আমলই দেখা যাবে। গুনাহ তো একটির স্থলে
একটিই লিখা হয়, কিন্তু পুণ্য বা
নেককাজ একটির বদলে দশ, বরং যার জন্যে
আল্লাহ চান এরচেয়ে অনেকগুণ বেশী লিখেন। আবার অনেক সময় নেকীর বদলে গুনাহ মার্জনাও
করে দেন। এক একটি নেকীর বদলে দশ দশটি গুনাহ্ মাফ হয়ে যায়। তারপর এমনও রয়েছে যে, যার পুণ্য বা নেকী
গুনাহর চেয়ে একবিন্দু পরিমাণ বেশী হবে সে জান্নাতে প্রবেশাধিকার লাভ করবে।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “পাপকে হালকা মনে করো না। সব পাপ একত্রিত হয়ে ধ্বংস করে দেয়।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)
এসব পাপের উদাহরণ প্রসঙ্গে বলেনঃ “যেমন কিছু লোক কোন জায়গায় অবতরণ করলো। তারপর একটি লোক একটি দুটি করে কাঠ কুড়িয়ে জমা করলো। এতে কাঠের একটা স্তুপ হয়ে গেল। তারপর ঐ কাঠে অগ্নি
সংযোগ করা হলো এবং তারা যা ইচ্ছা করলো তা রান্না করলো।”
(সূরাঃ যিলযাল এর তাফসীর সমাপ্ত)
--
❏ টীকাঃ
১. এ হাদীসটি সুনানে আবী
দাউদ ও সুনানে নাসাঈতেও বর্ণিত হয়েছে।
২. এ হাদীসটি গারীব বা
দুর্বল।
৩. এটাও গারীব বা দুর্বল হাদীস।
৪. এই হাদীসটি হাসান। এই তিনটি হাদীসই ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। তিনি ছাড়া আসহাবুল কুতুবের অন্য কেউ
এটা বর্ণনা করেননি।
৫. এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং আবু আবদির রহমান নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং
ইমাম তিরমিযী (রঃ) এ হাদীসটি হাসান-সহীহ গারীব বলেছেন।
৬. এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) এবং ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
৭. এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) ও ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
৮. এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
৯. এ হাদীসটিও ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
১০. আবু যারআহ (রঃ) বলেন যে, এই হাদীসটি শুধুমাত্র ইবনে লাহীআহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন।
No comments:
Post a Comment