❏ অনুবাদক পরিচিতি
১৯৩৬ সালে বাবলাবোনা নামক
এক ছায়া ঢাকা নিভৃত গ্রামে ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান এর জন্ম। পিতা অধ্যাপক মাওঃ
আবদুল গণীর কাছেই তার প্রথম হাতে খড়ি। প্রথমে রাজশাহী নবাবগঞ্জের পার্শ্ববর্তী
গ্রাম এবং পরে ঢাকা সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে কামিল পাশ করেন
১৯৫৫ সালে। ১৯৬২ সালে লাহোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. ও. এল ডিগ্রী নিয়ে তিনি
দাদনচকে প্রথম স্তরের ডিগ্রী কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। তার পিতা আবদুল গণী সাহেবও
এককালে ওখানে অধ্যাপনা করতেন।
ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর
রহমান দাদনচক থেকে যখন নবাবগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে গিয়ে অধ্যাপনা আরম্ভ করেন তখন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম, এ, পরীক্ষায় তিনি
প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা
বিভাগের প্রভাষক হন। পরবর্তীতে আরবী বিভাগের সভাপতি, সহযোগী অধ্যাপক এবং সর্বশেষ তিনি অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়
গ্রন্থাগারেও তিনি কিছু দিন উচ্চপদস্থ কর্মচারী হিসাবে কাজ করেছিলেন। বর্তমানে
তিনি নিউইয়র্ক শহরে এক ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক।
গতিশীল প্রবন্ধকার হিসাবে
ঢাকার ছাত্র জীবন থেকেই তিনি বেশ নিষ্ঠার সঙ্গে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। বিভিন্ন
ভাষায় তার বিচিত্র-ধর্মী প্রবন্ধমালা দেশ-বিদেশের একাধিক পত্র পত্রিকায়
ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। বাংলাদেশ ছাড়াও দিল্লী, হায়দরাবাদ, লাহোর, করাচী এবং
ইসলামাবাদের বিভিন্ন প্রথম শ্রেণীর উর্দু পত্রিকায় তার যে সব চিন্তাদীপ্ত ও
জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধমালা মুদ্রিত হয়, সেগুলি পরবর্তীতে নয়াদিল্লী, বেনারস ও ইসলামাবাদ থেকে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন
করতে সক্ষম হয়। এছাড়া বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের বহু সাময়িকী ও পত্র-পত্রিকায়
তার অসংখ্য তথ্য-সমৃদ্ধ ও উন্নত মানের প্রবন্ধ রাজি প্রকাশিত হয়েছে একাদিক্রমে।
এগুলি একত্রিত করে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলে বাংলা সাহিত্যের উৎকর্ষ ও পরিপুষ্টি
সাধিত হতো নিঃসন্দেহে। বর্তমানে সাগর পারের সুদূর প্রবাস থেকেও তিনি সেগুলি
প্রকাশনার উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে এর সঠিক বাস্তবায়ন রয়েছে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হাতেই।
১৯৫৩ সালের দিকে ঢাকার
বাংলা বাজারস্থ “ঢাকা প্রকাশ” নামক পত্রিকায়
তিনি একটি লেখা দিয়েছিলেন অন্তরের বহু সাধ ও আশা-আকাংখা পোষণ করে। লেখাটি মুদ্রণ
হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার নামে
নয়; বরং অন্যের নামে।
এরপর থেকে বুক ভরা দুঃখ এবং এই বঞ্চনা জনিত ক্ষোভে তিনি সাহিত্য চর্চা একরূপ
ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু এ নেশা যাকে একবার পেয়ে বসে, সে তা কোনদিন
পরিহার করতে পারে না। লোভী তার ভুলের মাশুল দিয়ে কম্বলকে ছাড়তে চাইলেও কম্বল
তাকে ভুলেও কখনো ছাড়ে কি ? ডঃ মুজীবুর রহমানের
সাহিত্য কর্ম ও রচনা শৈলীর অধিকাংশই ইসলামী সাহিত্যকে নিয়ে অনুবর্তিত। এ নিয়েই
তার নশ্বর জীবন হয়ে উঠেছে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। সে যাই হোক, উক্ত সালের শেষ
প্রান্তে ‘তরজুমানুল হাদীস' নামক উচ্চাঙ্গের এক সাময়িক পত্রিকা তার লেখা “ত্যাগের দৃষ্টান্ত ও আদর্শের প্রেরণা” শীর্ষক প্রবন্ধ ছাপে। তখন কিন্তু তার
ঢাকাস্থ ছাত্র-জীবনের পাঠ চুকিয়ে সবে মাত্র লাহোর শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়েছে।
এছাড়া দেশ-বিদেশের আরো বহু সাময়িক পত্র-পত্রিকায়, বিজ্ঞি শিক্ষায়তন এবং উচ্চতম বিদ্যাপীঠের ম্যাগাজিনে বহু মৌলিক এবং
ভাষান্তরিত প্রবন্ধাবলী, নাটিকা, ছোট গল্প ইত্যাদি
প্রকাশ পায়। সব মিলিয়ে এগুলির সংখ্যা প্রায় দেড়-দুই'শর কাছাকাছি। এগুলিকে
একত্রে সাজিয়ে গুছিয়ে গ্রন্থাবদ্ধ অবস্থায় বিন্যস্ত করে কয়েকটি আলাদা আলাদা
খন্ডে সংকলিত করা যেতে পারে।
কিন্তু তা করা কি আর সহজ ব্যাপার। ছাপাবে কে? এমনিতেই তার একাধিক
প্রবন্ধমালা ও গ্রন্থাবলীর পান্ডুলিপি হারিয়ে গেছে পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলী ও
প্রকাশকদের কাছ থেকে। বিগত রাষ্ট্র-বিপ্লব ও গণ-আন্দোলন জনিত ধ্বংস যজ্ঞের শিকার
হয়ে তার বেশ কিছু পান্ডুলিপি বিনষ্ট ও অবলুপ্ত হয়ে গেছে চিরতরে। আর যেগুলি আজো
পান্ডুলিপির আকারে আবদ্ধ থেকে গুমরে মরছে, সে সব কবে যে দিনের আলো দেখতে সক্ষম হবে তা একমাত্র অন্তর্যামীই জানেন।
একাধারে ৪-৫টি ভাষায়
সমান পারদর্শী এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাষা সমূহের প্রায় সবটাতেই তার কিছু না
কিছু বই পুস্তক ও প্রবন্ধাবলী প্রকাশিত হয়েছে অবলীলাক্রমে। অবসর মুহূর্তে তিনি
শিশু সাহিত্যের চর্চা করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে তার লেখা “বটগাছের ভূত”, “মৃত্যুর ভয়”, “ছোটদের ইবনে বতুতা” প্রভৃতি লেখাগুলি বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এভাবে সাহিত্যের অধিকাংশ শাখায়
সমানভাবে পদচারণা করতে গিয়ে তিনি প্রায় তিন যুগ ধরে বিভিন্ন ভাষায় নিরলস ভাবে কলম
চালিয়ে যাচ্ছেন। তার লেখায় কোন আবেগ প্রবণতা নেই, আছে মননশীলতার দীপ্তি। বিভিন্ন ভাষার সাহিত্য সাধনাকে তিনি স্বীয় উপজীবিকার
উৎস হিসাব গ্রহণ করেননি, বরং অবসর ক্ষণের
চিত্ত বিনোদন হিসেবেই বেছে নিয়েছেন।
১৯৫৩-এর দিকে উচ্চ
শিক্ষার্থে লাহোর গিয়ে তিনি দেখেন, সেই পরিবেশ সম্পূর্ণই নতুন এবং একেবারেই আলাদা। সেখানকার ভাষা ও সাহিত্য বাংলা
নয়; বরং উর্দু। তাই
উর্দু সাহিত্যকে বাংলায় ভাষান্তরিত করে এদেশের জনগণের জন্য এদেশেরই পত্রপত্রিকায়
পাঠাতেন। এগুলির সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
বিভিন্ন ভাষায় লিখিত তার
বইগুলির মধ্যে “মামীনে মুজীব” (নয়া দিল্লী থেকে
প্রকাশ) ‘ইমাম বুখারী’ ‘ইমাম মুসলিম’ ‘মুহাদ্দিস প্রসঙ্গ’ ‘হযরত ইব্রাহীম’ ‘মুসলমানদের সাহিত্য
সাধনা’ ‘ইসলামী সাহিত্যে
তসলিমুদ্দীন’, ‘মিসরের ছোট গল্প’ ‘কোরআন কণিকা’ ‘তাফসীর ইবনে কাসীর’ ‘আরবী সাহিত্যের ইতিহাস' ‘মদীনার আনসার ও হযরত আবু আইউব আনসারী’ ‘বাংলা ভাষায় কোরআন চর্চা' ‘মওলানা মুহাম্মদ জুনাগড়ী (রহঃ)' নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামায’ ‘ইদ্রিস মিয়া
মুহাদ্দিস আযীমাবাদী’ প্রভৃতি বিশেষ
উল্লেখ্যের দাবীদার। উপরোক্ত বিষয়বস্তুই হচ্ছে তার রচনাশৈলী ও সাহিত্য চর্চার
প্রধান উপজীব্য বিষয়।
ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর
রহমান কৃত অধিকাংশ বই ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত। তার ‘আল্লামা জারুল্লাহ' শীর্ষক বইটি প্রথমে
ইসলামাবাদ থেকে উর্দুতে প্রকাশ পায়। এর বাংলা সংস্করণটি প্রথমে ধারাবাহিক ইসলামিক
ফাউন্ডেশন পত্রিকায় এবং পরে উক্ত সংস্থা থেকে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। তার “কোরআনের চিরন্তন মুজিযা” শীর্ষক বইটিও
প্রথমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে এবং পরবর্তীতে এর সংস্করণটি বেনারস থেকে প্রকাশিত।
এর অপূর্ব জনপ্রিয়তার এটাই প্রকৃষ্ট প্রমাণ যে, স্বল্প দিনে উভয়েরই বেশ কয়েকটি সংস্করণ বেরিয়ে যায়। “মামীনে মুজীব” নামক বইটি একাধিক
খন্ডে ভারতের নয়া দিল্লী থেকে প্রকাশিত হয়। ‘বাংলা ভাষায় পবিত্র কোরআন চর্চার পটভূমি’ শীর্ষক বইটি গুলবাহার খাতুন কর্তৃক ২৪ পরগণার চিংড়িপোতা থেকে প্রকাশিত। এটি
তার পি. এইচ. ডি. থিসিসেরই একাংশ। এর শুরুতে বেশ মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ
মুখবন্ধটি হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও প্রবীণ গবেষক এম, আবদুর রহমানের
লেখনী প্রসূত।
মিসর থেকে থিসিস করার সুযোগ
পেয়েও ভাগ্যচক্রে পরবর্তীতে যেহেতু তাকে সেই সুযোগটি হারাতে হয়েছিল, তাই ১৯৮১ সালের
শুরুতে উক্ত বিষয়বস্তু শীর্ষক থিসিসের ফলশ্রুতিতে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। দেশী-বিদেশী পরীক্ষক মন্ডলীগণ সম্মিলিত ভাবে
মন্তব্য করেছিলেন যে, এই আলোচ্য সুলিখিত
অভিসন্দর্ভটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
এটিও ঢাকার ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত। এর সূচনাংশে বেশ তথ্য সমৃদ্ধ মুখবন্ধ
লিখেছেন যথাক্রমে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ডঃ হাবীবুর রহমান চৌধুরী ও ইসলামিক
ফাউন্ডেশনের তৎকালীন মহাপরিচালক জনাব আবদুস সোবহান সাহেব।
ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর
রহমান বাংলাদেশের ইতিহাস সমিতি ইতিহাস পরিষদ ‘এশিয়েটিক সোসাইটি' ও 'বাংলা একাডেমী’র আজীবন সদস্য। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন', ঢাকা; বাংলাদেশ পরিষদ, রাজশাহী; শাহ মাখদুম
ইনষ্টিটিউট, রাজশাহী প্রভৃতি
সংস্থা ও সংগঠনের সদস্য হিসাবে তিনি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। বেশ কিছুদিন পূর্বে কলতাকার ইন্দো-আরব কালচারাল
এসোসিয়েশনও তাকে সদস্যপদ প্রদান করেছে।
এদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন
মুখী জাতীয় সম্মেলন এবং বড় বড় সভা সমিতিতে তিনি সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন এবং
ইসলাম ধর্ম ও ইসলামী সাহিত্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোকপাত
করেন। অনুরূপভাবে একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধন কল্পে তিনি বিদেশের বহু আন্তর্জাতিক
সম্মেলনে যোগদান এবং চিন্তাদীপ্ত ও জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধরাজির উপস্থাপনা করে দেশের
প্রতিনিধিত্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় সমূহেও তিনি ভাষণ দান
করেন। এভাবে মক্কার উম্মুল কোরা ও মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লী
বিশ্ববিদ্যালয় ও জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়, পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, করাচী, মুলতান ও
বাহাওয়ালপুর বিশ্ববিদ্যালয়, লাহোর ও ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় এবং এসব শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে
উপস্থিত ভাষন দান ও চিন্তাদীপ্ত প্রবন্ধ পাঠের মাধ্যমে তিনি বরাবর অংশ গ্রহণ করেন।
অনুরূপ ভাবে লন্ডন, বার্মিংহাম, লেইসটার, ইসতামবুল, রাজস্থান, আসামের রতনপুর, হাইলাকান্দী
প্রভৃতি শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সেমিনারেও তিনি যোগদান করেন এবং মূল্যবান
প্রবন্ধ পাঠ করেন।
মোটকথা, প্রায় ১২-১৪টি
দেশে তিনি ভ্রমণ করেছেন উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার প্রচার-প্রসারের লক্ষ্য ও
উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়েই। তাই এতো নদ-নদী আর সাগর-মহাসাগর পারি দিয়ে এই গগণচুম্বী পরিবেষ্টিত সুদূর আমেরিকার মাটিতে তার
প্রথম ও একমাত্র প্রবাস জীবন বললে ভুল হবে। কারণ আগেই বলেছি, ছাত্র জীবন থেকেই তিনি অতি ব্যাপকভাবে সস্ত্রীক পরিভ্রমণ করেছেন বিচিত্র দেশের পথ-প্রান্তর। প্রত্যক্ষ করেছেন বিভিন্ন ও বিচিত্র ধরণের জাতি, ধর্ম ও মানুষ এবং
নানা অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ জীবনধারা। সব কিছুই দেখতে চেয়েছেন অতি সহজ, সরল, অনাড়ম্বর এবং
স্বচ্ছ দৃষ্টি দিয়ে এবং অকপটে ব্যক্ত করেছেন স্বীয় পছন্দ, অপছন্দ ও ভালো
মন্দের কথা।
পূর্বেই বলেছি, মিসরের মাটি থেকে
আরবী ভাষায় পি. এইচ. ডি করতে চেয়েও তিনি বঞ্চিত হয়েছিলেন। কিন্তু এ সত্ত্বেও এই
মিসরকে তিনি অন্তর দিয়ে ভালবাসেন। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ হিসাবে তার লেখা “মিসরের ছোট গল্প”, “মার্গারেট”, “স্মৃতিময় শৈশব” প্রভৃতির নামোল্লেখ
করা যেতে পারে। এই শেশোক্ত গ্রন্থদ্বয় দীর্ঘ এক বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত
হয় যথাক্রমে দৈনিক মিল্লাতের সাহিত্য পাতায় এবং মাসিক অনুক্তের পৃষ্ঠা সমূহে।
বিভিন্ন সংস্করণ এই বইগুলির জনপ্রিয়তার প্রমাণ।
স্বীয় মাতৃভাষা বাংলায়
রচিত তার অধিকাংশ রচনাশৈলীর মাধ্যমে এই ভাষা ও সাহিত্যের ইসলামী ধারাটিকে সুসমৃদ্ধ
ও সরস করে তুলতে তিনি সক্ষম হয়েছেন। এভাবে মুসলিম মানস ও ব্যক্তিত্ব, ইতিহাস এবং
প্রাসঙ্গিক বিষয় বস্তুগুলিকে নতুন আঙ্গিকে প্রথম বারের মতো তিনি বিদগ্ধ পাঠক
মহলের সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন। এসব রচনাশৈলী ও সাহিত্যধারা প্রকৃত প্রস্তাবে তার
অনুসন্ধিৎসু পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা মূলক মনোবৃত্তিরই পরিচায়ক। এ সবের মাধ্যমে বহু
অজ্ঞাত ইতিহাস এবং দূর্লভ ও অপ্রাপ্তব্য তত্ত্ব ও তথ্যের সাথে আমাদের সম্যক পরিচয়
ঘটেছে।
একান্তই নিঃস্ব, রিক্ত ও
নিঃসহায়দের যুগ যন্ত্রণা বুকের মাঝে পুষে রেখে এক মাত্র আল্লাহর আশীষ ধারাকে
রক্ষাকবজ করে শিক্ষকতার মাধ্যমে তার এই ক্ষণস্থায়ী নশ্বর জীবনের সূত্রপাত ঘটে।
প্রায় তিন যুগ ধরে নিরলস শিক্ষাদান ও লাগাতার সাহিত্য সেবাই তার জীবনের চরম ও পরম
লক্ষ্য। বিষয়বস্তুর গভীরতম প্রদেশে অনুপ্রবেশ করে।তথ্যানুসন্ধানের আজন্ম প্রবণতাই
তার সম্মুখ পানে হাজির করেছে পরিশীলিত বাণী। আর তার সাহিত্য সৃষ্টিতে যুগিয়েছে
বিচিত্র ধরণের মাল-মসলা এবং উপাদান উপকরণ।নিরস্তর সাহিত্য সৃষ্টিতে তার বিচিত্র
অন্তদৃষ্টি ও বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সমাহার ঘটেছে উপর্যুপরি প্রকাশিত
গ্রন্থমালায়। বিভিন্ন ভাষা ও সাহিত্য-শিল্পের স্মরণীতে তার প্রকাশনাগুলি
নিঃসন্দেহে যেন এক একটি স্বগর্ব অধ্যায় ও পথ নির্দেশক। এই অবিশ্রান্ত সংগ্রাম এবং
অবিরাম প্রচেষ্টার মাধ্যমেই তিনি প্রথমে উপনীত হয়েছেন গন্ড-গ্রাম-গঞ্জের নিভৃত কোণ থেকে শহরে বন্দরে এবং পরে রাজধানী নগরে, আর সর্বশেষ এসেছেন
সুদূর আমেরিকার মাটিতে তথা নিউইয়র্ক নগরীতে। বর্তমানে তিনি এই শহরে এই উচ্চাঙ্গের
শিক্ষা কেন্দ্রের (এডুকেশন সেন্টার) পরিচালক। আর ইতিপূর্বে ছিলেন “টেষ্টিমনি” নামক এক ইংরেজী
মাসিক পত্রিকার সহ-সম্পাদক।
কিন্তু এই সুদূর প্রবাসের
অতি ব্যস্ত সমস্ত এবং সংগ্রাম মুখর জীবনেও কি তার লেখনী কিংবা সাহিত্য চর্চায় কোন
রূপ ছেদ বা ভাটা পড়েছে কিংবা একেবারেই এর পরিসমাপ্তি ঘটেছে? না, আদৌ তা হয়নি, বরং তার বলিষ্ঠ
কলমের মাধ্যমে তা পূর্বের মতোই রয়েছে চির চলমান এবং সদা আগুয়ান।
No comments:
Post a Comment